দিনের বেলায় ব্যক্তিগত কিংবা অফিসের কাজের সময় অনেকেরই ঘুমে ভারী হয়ে আসে চোখ, হাই ওঠে। এমনও হয়ে থাকে টেবিলে বসে কাজের সময় ঝিমুনি আসে। এসব কারণে কাজের মনোযোগ নষ্ট হয়। এ ধরনের সমস্যায় অনেকেই মনে করেন, রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে দিনে ঘুমের ঝোঁক আসছে।
এমনটা সবার ধারণা হলেও তা ভুল। ঘুম ছাড়াও খাবার ও জীবনধারার কারণে উল্লেখিত সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। আর দিনে ঘুমের ঝোঁক আসা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম। প্রতিবেদনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে সেসব বিষয়ে জেনে নেয়া যাক-
দিনে ঘুম আসার কারণ:
অতিরিক্ত পরিমাণ ভাজা, মিষ্টি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার উঠানামা হয়। যা শরীরকে দুর্বল করে তোলে। এ কারণে দিনের বেলায়ও কিছুক্ষণ পরপরই ঘুমে ভারী হয়ে যায় চোখ।
এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব হলেও দিনে ঘুম আসে। অনিয়মিত ঘুম, কম শরীরচর্চা ও দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করার অভ্যাস থাকলে ঝিমুনি বাড়ে। আবার ডিহাইড্রেশনও অন্যতম একটি কারণ। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না হলে স্বাভাবিকভাবে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে ও চোখে ঘুম ঘুম লাগে। এ কারণেও দিনের বেলায় ঘুম আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু খাবার রয়েছে যা খাওয়া হলে দিনের বেলায় অলসতা বাড়ে। যেমন- পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট বা পাস্তা, পিৎজা, রুটি ও ময়দার তৈরি রকমারি খাবার। মিষ্টি ও সফট ড্রিংকস পানে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া গেলেও এসব রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে পরবর্তীতে ক্লান্ত করে দেয় শরীর। ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার হজমে দীর্ঘ সময় নেয়, পেট ভারী করে এবং এ ধরনের খাবার খাওয়া হলে ঘুম আসে চোখে।
আচার, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার শরীরকে ডিহাইড্রেট করে। ফলে ক্লান্তি বাড়ে। ট্রিপটোফ্যানযুক্ত খাবার যেমন- ওটস, বাদাম, টোফু, কলা, অ্যাভোকাডো স্বাস্থ্যকর হলেও এসবও দিনের বেলায় ঘুমের কারণ। এসব রাতে খাওয়া হলেও দিনে এর রেশ থেকে যায় বলে ঘুমের ঝুঁকি থাকে।
এদিকে দিনের বেলায় ক্লাস, অফিস বা কাজের সময় ঘুমিয়ে পড়লে সার্বিকভাবে ক্ষতি। গবেষণা বলছে, এতে দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, স্থূলতা এমনকী অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এ জন্য এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ভাজা, মিষ্টি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার গ্রহণ কমিয়ে ফেলুন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন, প্রতিদিন অল্প হাঁটা বা ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে স্মার্ট স্ন্যাকস বেছে নিন। বাদাম, ফল বা দই খেতে পারেন। এসব ক্লান্তি কাটায়। রাতে জেগে থাকার অভ্যাস থাকলে তা বন্ধ করুন। অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। দিনে ঘুমের ঝোঁক একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে খাবার ও লাইফস্টাইলের বড় ভূমিকা থাকে। এ জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও নিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল বেছে নিন। এতে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকবে।