লিভার সচরাচর তেমন কোনো সতর্কবার্তা দেয় না। কিন্তু যখন দেয়, তখন সেটা খুবই গুরুতর। ফ্যাটি লিভার এখন আর শুধু মাত্র মদ্যপান বা স্থূলতার সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটা এখন এমন অনেক মানুষের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে যারা না খায় বেশি, না পান করেন। এর গোপন কারণ হলো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, যা লিভারকে চাপে ফেলে এবং সঠিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করে।
ভালো খবর হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধযোগ্য। মাত্র ৯০ দিনের পরিবর্তনেই লিভার নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করতে পারে। নিচে এমন ৭টি দৈনন্দিন পরিবর্তনের কথা বলা হলো যা আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
১. চিনি নিয়ে ভুল ধারণা বাদ দিন
অনেকেই মনে করেন চিনি কেবল ওজন বাড়ায়। কিন্তু চিনি, বিশেষ করে ফ্রুকটোজ, সরাসরি লিভারে ফ্যাট হিসেবে জমা হয় যদিও আপনি চিকন হন। ফলের জুস, ফ্লেভার্ড দই, এনার্জি বার বা তথাকথিত ‘হেলদি সিরাপ’ সবই লিভারের জন্য ক্ষতিকর। ফল খেতে পারেন, কিন্তু ফলের রস নয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ডায়েট সোডা এড়িয়ে চলুন।
২. প্রতিদিনের রুটিনে ফাইবার রাখুন
ফাইবার শুধু হজমে সাহায্য করে এমন ভাবা ভুল। এটি ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং হরমোন ব্যাল্যান্স করতে সাহায্য করে, যা ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। মেথি, চিয়া বীজ, ছোলা, ডাল ও ব্রকোলির মতো সবজি লিভারের বন্ধু।
৩. ভালো চর্বি বেছে নিন: ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার
সব চর্বি ক্ষতিকর নয়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড লিভারের ফ্যাট জমা কমায় এবং প্রদাহ হ্রাস করে। সামুদ্রিক মাছ, ফ্ল্যাক্সসিড তেল এবং আখরোট ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস।
৪. উদ্ভিজ্জ উপাদানে আছে লুকানো ওষুধ: পলিফেনল
অনেকে ভাবেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুধু ত্বক বা বয়সের জন্য দরকার। কিন্তু বেরি, অলিভ অয়েল, ম্যাচা, ডালিম, হলুদ (গোলমরিচসহ) ইত্যাদি খাবারে থাকা পলিফেনল লিভারের অভ্যন্তরীণ স্ট্রেস কমায় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। এগুলো লিভারের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে।
৫. ঘুমের গুরুত্ব বুঝুন
ঘুম ঠিকমতো না হলে লিভারে ফ্যাট জমার সম্ভাবনা বাড়ে। ঘুম বঞ্চনা লিভারের বিপাক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
৬. খাবারের সময় মেনে চলুন
অনেকে ভাবেন শুধু ওজনের জন্যই দেরিতে খাওয়া ক্ষতিকর। আসলে লিভার যখন হজমে ব্যস্ত থাকে না, তখনই নিজের ক্ষত সারাতে পারে। সন্ধ্যার খাবার অন্তত ২–৩ ঘণ্টা আগে শেষ করুন, যাতে লিভার চর্বি পোড়াতে পারে।
৭. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
কম চর্বিযুক্ত বা ‘ডায়েট’ লেখা খাবার সবসময় স্বাস্থ্যকর নয়। এতে থাকে পরিশোধিত কার্ব, ট্রান্সফ্যাট ও বিভিন্ন ক্ষতিকর সংযোজক, যা লিভারের ক্ষতি করে। এর বদলে খেতে পারেন উনুনে ভাজা বাদাম, সেদ্ধ ছোলা বা তাজা ফল।
ফ্যাটি লিভার কেন প্রতিরোধ করা জরুরি?
প্রথমদিকে ফ্যাটি লিভার তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। যদি সময়মতো প্রতিরোধ না করা হয়, তবে এটি ‘ফাইব্রোসিস’ বা দগদগে চিহ্ন ফেলে দিতে পারে লিভারে। এরপর ধীরে ধীরে তা ‘সিরোসিস’-এ পরিণত হতে পারে যেখানে লিভার এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে তা স্বাভাবিকভাবে আর কাজ করতে পারে না।
তাই আজ থেকেই ছোট ছোট পরিবর্তন আনুন আপনার খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে ৯০ দিন পরেই লিভার থাকবে আরও সুস্থ, আরও শক্তিশালী।
এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়। নতুন কোনো খাদ্যাভ্যাস বা সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া