লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করা পর্যন্ত নানা উপকারে আসে। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে লেবুপানি পান হজমের উন্নতি এবং শরীর সতেজ রাখতে জনপ্রিয় একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই অভ্যাস কতটা নিরাপদ সেটি নিয়েই রয়েছে নানা প্রশ্ন। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সকালে খালি পেটে লেবুপানি পান করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে, বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ বা কমানোর চেষ্টা করছেন তাদের মধ্যে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটি কি সত্যিই ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর, নাকি কেবল জনপ্রিয় একটি স্বাস্থ্যধারণা। হেলথলাইনের এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
গবেষণা যা বলছে: সকালে লেবু পানি পান করার বিষয়টি নিয়ে ২০১৮ সালে একটি গবেষণা করা হয়। গবেষণায় অংশ নেয়া একদলকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবুপানি পান করানো হয়, অন্য দলকে লেবুপানি ছাড়া রাখা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, যারা লেবুপানি পান করছিলেন তারা দ্রুত পেট ভরা অনুভব করছিলেন এবং ক্ষুধা কম পাচ্ছিলেন। এর ফলে তাদের খাবারের পরিমাণ ও দৈনিক ক্যালরি গ্রহণ কমে যাচ্ছিল, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ছিল।
পুষ্টিবিদদের মতে, লেবুপানি পান করলে ক্ষুধা কিছুটা কমে এবং পেট ভরা অনুভূতি আসে, ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ এড়ানো সম্ভব হয়। তবে এটিও মনে রাখা জরুরি লেবুপানি কোনো ‘জাদুকরী’ পানীয় নয়। শুধু এটি পান করলেই ওজন কমবে না; স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সঠিক পরিমাণে ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে মিলিয়ে এই অভ্যাস বজায় রাখলে তবেই কার্যকর ফল পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, লেবুর প্রাকৃতিক অম্লধর্মী উপাদান অনেক সময় পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। ফলে পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, গ্যাস্ট্রিক রোগীরা খালি পেটে লেবুপানি পান শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। সঠিক উপায় ও পরিমাণ মেনে চললে লেবুপানি অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক রোগীদের জন্যও উপকারী হতে পারে, তবে ভুলভাবে গ্রহণ করলে তা উল্টো ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
লেবুপানির অন্যান্য স্বাস্থ্যগুণ: ওজন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও লেবুপানির আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে—
বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি: সকালে খালি পেটে ৪০০ মিলিলিটার পানি, বিশেষ করে লেবু মিশ্রিত গরম পানি পান করলে বিপাকক্রিয়ার হার বেড়ে যায়, যা খাবার হজমে সহায়তা করে।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করা: লেবুর খোসা চিবিয়ে খাওয়াও হজমে উপকারী হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা: লেবুর রসের সঙ্গে গরম পানি, মধু ও সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে যায়।
শরীর সতেজ রাখা: গরমের দিনে সকালে লেবুপানি শরীরকে সারাদিন সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
সতর্কতা: যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তারা খালি পেটে লেবুপানি পান করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। এছাড়া সারাদিন অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শুধুমাত্র সকালে লেবুপানি পান করলে এর উপকার মিলবে না।
লেবুপানি নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে এবং শরীরের জন্য অন্যান্য উপকারও নিয়ে আসে। তবে এটি একা কোনো সমাধান নয় বরং সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুমের সঙ্গে মিলে গেলে লেবুপানি আপনার সুস্থ জীবনের যাত্রায় সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।