পাকিস্তানে প্রতি ভরি সোনার দাম আড়াই লাখ ছুঁই ছুঁই

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে পাকিস্তান। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের উত্তাপ। আর এই দুইয়ে মিলে পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে বেড়েছে সোনার দাম। এমনকি বুধবার (১০ মে) দেশটিতে সোনার এই দাম এতোটাই বেড়েছে যে তা আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে এখন প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে প্রায় আড়াই লাখ রুপিতে। যদিও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। বৃহস্পতিবার (১১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে সোনার দাম প্রতি ভরিতে রেকর্ড ২ লাখ ৪০ হাজার রুপিতে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হওয়া সত্ত্বেও বুধবার পাকিস্তানে সোনার দাম এক দিনে প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ ৯৯০০ রুপি এবং ১০ গ্রাম স্বর্ণে ৮ হাজার ৪৮৭ রুপি বৃদ্ধি পেয়েছে।

আর এতেই ভরিতে আড়াই লাখ রুপির দোরগোড়ায় পৌঁছেছে মূল্যবান এই ধাতু।

অল সিন্ধ সরফ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, স্বর্ণের দোকানগুলোতে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ ২ লাখ ৪০ হাজার রুপিতে পৌঁছেছে। আর প্রতি দশগ্রাম স্বর্ণের দামও রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৫ হাজার ৭৬১ রুপিতে পৌঁছেছে। যদিও বিশ্ব বাজারে হলুদ এই ধাতুর দাম প্রতি আউন্স ২ হাজার ৩১ মার্কিন ডলারে অপরিবর্তিত রয়েছে।

দ্য ডন বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই পাকিস্তানে স্বর্ণের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে প্রতি ভরি এবং প্রতি ১০ গ্রাম স্বর্ণের দাম যথাক্রমে ৫২ হাজার ৮০০ রুপি এবং ৪৫ হাজার ২৬৭ রুপি বেড়েছে।

যেখানে একই সময়সীমায় বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্সে সোনার দাম বেড়েছে ২০৭ মার্কিন ডলার। গত ১ জানুয়ারি এক ভরি, ১০ গ্রাম এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ রুপি, ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৯৪ রুপি এবং আউন্স প্রতি ১ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে পাকিস্তানের মুদ্রারও ব্যাপক দরপতন হয়েছে। দ্য ডন বলছে, বুধবার আন্তঃব্যাংক বাজারে পাকিস্তানি রুপি ডলারের বিপরীতে রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এদিন এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রার মূল্য দাঁড়ায় ২৯০.২২ রুপিতে।

অর্থাৎ প্রতি মার্কিন ডলারের জন্য ২৯০ রুপিরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে পাকিস্তানে। যা মঙ্গলবারের তুলনায় ১.৮৫ শতাংশ বা ৫.৩৮ রুপি বেশি। মূলত আন্তর্জাতিক মূল্যের দৈনিক ওঠানামা এবং রুপি-ডলার বিনিময় হারের মাধ্যমে দেশীয় সোনার দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে।

অল পাকিস্তান জুয়েলার্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এপিজেএমএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আরশাদ বলেছেন: ‘মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে শক্তিশালী মাফিয়া এবং বিনিয়োগকারী উভয়ই ১০-তোলা সোনার বার কেনার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। মূলত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর গ্রেপ্তারের পর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে আতঙ্কের কারণে তারা সোনার বার কিনছেন। এমনকি বিনিয়োগকারীরা এই সর্বোচ্চ হারে সোনার বার বুকিংও দিচ্ছেন।’

বিপরীত দিকে পবিত্র রমজান মাস শেষে ঈদুল ফিতরের পরে চলমান বিয়ের মৌসুমেও গহনা বিক্রি মাত্র ১০ শতাংশেই রয়ে গেছে বলে জানান তিনি। মোহাম্মদ আরশাদ বলেন, ‘অনেক লোক রেকর্ড উচ্চ দামে মূল্যবান এই হলুদ ধাতু কিনতে অক্ষম এবং আর এটিই গহনা কেনা কমে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ।’

মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্তের জন্য ভবিষ্যতে সোনার গয়না কেনা চ্যালেঞ্জিং কাজ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

টপলাইন সিকিউরিটিজের সিইও মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘রুপির ব্যাপক অবমূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক গোলমালের কারণে কিছু বিনিয়োগকারী সোনা কিনছেন।’

ইসমাইল ইকবাল সিকিউরিটিজের হেড অব রিসার্চ ফাহাদ রউফ বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা সোনা কেনার দিকে ধাবিত হচ্ছে। কারণ সোনা কেনা অর্থ বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত।’

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com