ইতিহাস গড়ে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্পোর্টস ডেস্ক : প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের আভাস দিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে হেরে যায় স্বাগতিকরা। বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ ম্যাচে ৬ উইকেটে জিতে ইতিহাস গড়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করলেও সীমিত ওভারের আরেক ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের জায়গা নড়বড়ে ছিল বেশ। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ভাবনা বাড়ছিল টাইগারদের। তবে সম্প্রতি এই ফরম্যাটেও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। নিজেদের খেলা সবশেষ তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবগুলোতেই জিতেছে টাইগাররা।

কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে আসলো বাংলাদেশ দল। ঘরের মাঠে ফিরেই ইতিহাস রচনা করে টাইগাররা। প্রথমারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় অজিদের। আরও একটি ইতিহাস রচনা হলো আজ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো কুড়ি ওভারের সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল।

কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ শুরু হয় গত ১ সেপ্টেম্বর। প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখিয়ে জেতে স্বাগতিকরা। গত ৫ সেপ্টেম্বর সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ জিতলে ইতিহাস লেখা হতো সেদিনই, তবে অপেক্ষা বাড়লেও আক্ষেপে পুড়তে হয়নি স্বাগতিকদের। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে কিউইদের ৯৩ রানে বেধে দিয়ে ৯৪ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ৬ উইকেটের জয়। এতেই লেখা হয়েছে ইতিহাস!

এদিন আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের বোলিং তোপে একেবারেই সুবিধা করেত পারেনি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৯৩ রানেই গুঁটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও ছিল বেশ নড়বড়ে। প্রথম দুই ওভার থেকে স্কোর বোর্ডে ৪ রান তুলতে পারেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখ।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে ব্রেক-থ্রু এনে দিন স্পিনার কোল ম্যাককঞ্চি। ফেরান ৬ রানে ব্যাট করা লিটনকে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন এজাজ প্যাটেল। শুরুতে তার শিকারে পরিণত হন সাকিব আল হাসান। ৮ বলে ৮ রান করে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। দুই বল বাদে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিকুর রহিম। রানের খাতা খুলতে পারেননি এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।

টস হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে বোলাররা নিউ জিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহ পেতে দেয়নি। ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় অতিথিরা। বাংলাদেশের ব্যাটিংও ছিল ভুলে ভরা। তবুও শেষ হাসিটা হেসেছে স্বাগতিকরাই। ৫ বল আগে ৬ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ জয় নিশ্চিত করে। এক ম্যাচ হাতে রেখে ৩-১ ব্যবধানে মাহমদউল্লাহরা জিতে নেয় সিরিজ।

১২০ বলে লক্ষ্য মাত্র ৯৪। কিন্তু এ রান করতে গিয়েই ‘লেজেগোবরে’ অবস্থা। লিটন স্পিনার ম্যাককনচি বল মিড উইকেট দিয়ে চার মারার পর স্লগ সুইপে ক্যাচ তুলে আউট হন ৬ রানে। তিনে ফেরা সাকিব এজাজ প্যাটেলের বল ইয়র্কার বানিয়ে স্টাম্পড ৮ রানে। নিজের ছায়া হয়ে থাকা মুশফিক এজাজের ওই ওভারেই সুইপ করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড। কিউইদের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্সের সূচক অবশ্য নিম্নমুখী। আট ইানিংসের চারটিতেই খুলতে পারেননি রানের খাতা। পাওয়ার প্লে’তে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ছিল চাপে।

সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে পরিস্থিতি সামলে নেন মাহমুদউল্লাহ ও নাঈম। তবে রানের গতি ছিল একেবারেই কম। ৫০ বলে তারা করেন মাত্র ৩৪ রান। ওপেনার নাঈম খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী রানও তুলতে পারেননি। ৩৫ বলে ২৯ রান করে নাঈম যখন রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৭ রান। হাতে ৩৩ বল। তরুণ আফিফকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ দলকে বিপদে পড়তে দেননি।

শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ১১ রান। টিকনারের করা স্লোয়ার বলটি মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ সব চাপ নিমিষেই উড়িয়ে দেন। শেষ ওভারে তার ব্যাটেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। তার অপরাজিত ৪৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংসে ছিল ১ চার ও ২ ছক্কার মার। আফিফ ১০ বলে ৬ রান করে সঙ্গ দিয়েছেন ভালোভাবেই।

এর আগে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংস গুঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের দুই বোলার। শুরুতে স্পিনার নাসুম ৪ উইকেট নিয়ে ব্যাটিং অর্ডারের মাথা ও পেটে আঘাত করেছেন। সমান উইকেটে লেজটা কেটেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুজনের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা ছিল কে কাকে ছাপিয়ে যাবেন।

ইনিংসের প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়া নাসুম ৪ ওভারে ২ মেডেনে রান দিয়েছেন মাত্র ১০। দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও ফিন অ্যালেনকে সাজঘরে ফেরত পাঠানোর পর হেনরি নিকোলস ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকেও আউট করেন নাসুম। নিকোলসের উইকেটটা নিশ্চয়ই দীর্ঘদিন মনে রাখবেন। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করে অফস্টাম্পে পিচ করিয়ে ব্যাট প্যাডের ফাঁক দিযে নিকোলসের মিডল ও লেগ স্টাম্পে আঘাত করে।

মোস্তাফিজ ষষ্ঠ ওভারে প্রথম বোলিংয়ে এলেও তাকে শেষের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাতে কাজের কাজও হয়েছে। প্রথম ওভারে ৩ রানে উইকেটশূন্য থাকা মোস্তাফিজ পরের ২.৩ ওভারে ৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ১৬তম ওভারে ফিরে এসে টম ব্লান্ডেল ও ম্যাককনচির উইকেট নেন। পরের দুই ওভারে তার শিকার টিকনার ও ইয়াং।

নাসুম ও মোস্তাফিজের দ্যুতি ছড়ানোর দিনে সাকিব অবশ্য উইকেটশূন্য। অনেক কিছু করার চেষ্টায় সাকিব তালগোল পাকিয়ে উইকেটই পাননি। ফলে তার টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড হতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

অতিথিদের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন উইল ইয়াং। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৮ বলে ৪৬ রান করেন ৫ চার ও ১ ছক্কায়। এছাড়া দুই অঙ্কের ঘর ছুঁয়েছেন টম ল্যাথাম (২১) ও অ্যালেন (১২) ।

জয় পাওয়া ম্যাচেও বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে গেল। প্রশ্নটা ব্যাটসমানদের ঘিরেই। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেভাবে দিনের পর দিন ব্যর্থ হচ্ছেন, বিশ্বকাপের আগে তাদের অফ-ফর্ম মাথা ব্যথার বড় কারণ। দায়িত্ব নিয়ে কেউই যে রান করতে পারছেন না। পারছে না দলের চাহিদা মেটাতেও।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com