ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তরুণীকে হত্যা, গ্রেপ্তার দুই

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে পরিত্যক্ত কোল্ডস্টোরেজে নারী শ্রমিক মাহিনুর আক্তার পারুল হত্যার আড়াই মাস পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেন ও তার সহযোগী জাহাঙ্গীর সর্দার নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধর্ষণ করতে না পেরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মাহিনুরকে হত্যা করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরআগে সোমবার (১৭ এপ্রিল) দেলোয়ারকে গাজীপুর জেলার মৌচাক এলাকা থেকে ও জাহাঙ্গীরকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দেলোয়ার সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মধ্য চররমনী মোহন গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ও জাহাঙ্গীর চররমনী মোহন গ্রামের মজিবুল সর্দারের ছেলে। দেলোয়ার পেশায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মাহিনুর সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের নুর নবীর মেয়ে। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা ছিলেন। তার ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মাহিনুর লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরীর একটি চকলেট কারখানার শ্রমিক ছিলেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বকেয়া বেতনের জন্য তিনি কারখানাতে যান। এরপর তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। দুইদিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি চররমনী ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট এলাকার পরিত্যক্ত কোল্ডস্টোরেজ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে মাহিনুরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ছবি ছড়িয়ে দিলেই একইদিন পরিচয় শনাক্ত হয়। একইদিন রাতে নিহতের বড় ভাই মো. তামিম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তবে হত্যার ঘটনাটি পুরোই অজ্ঞাত ছিল। এটি তদন্তকালে পুলিশ স্থানীয় মাদকসেবীসহ বিভিন্ন জনকে নজরে রাখে। সেখানে একটি সিসি ক্যামেরা ছিল, তা থেকেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে প্রযুক্তির মাধ্যমে ল্যাক এবং সেল বের করে ঘটনাস্থলে কারা কারা আসে তা শনাক্ত করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ৪০-৫০ জনের নাম পেয়েছি। এরমধ্যে সিএনজি চালক দেলোয়ারের নামও ছিল। কিন্তু ঘটনার দিন ও তার ল্যাক সেল আইডির দিন থেকে গ্রেপ্তারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত এ এলাকায় উপস্থিতি শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরসহ আরও কয়েকজনকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পরে সোমবার দেলোয়ারকে গাজীপুরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এলাকাতে না থাকার সন্দেহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন কথার মাধ্যমে সে একপর্যায়ে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে। ১৬৪ ধারায় সে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।

দেলোয়ারের জবানবন্দির বরাত দিয়ে এসপি জানিয়েছেন, মাহিনুর বকেয়া বেতনের জন্য কারাখানায় গেলেও দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে কারাখানা থেকে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। এতে পথিমধ্যে একটি গ্যাস পাম্পের সামনে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন যাত্রী হিসেবে তাকে দেলোয়ার সিএনজিতে উঠায়। এসময় মাহিনুর সিএনজি চালক দেলোয়ারের সঙ্গে তার জীবনের কিছু গল্প শেয়ার করে। এতে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরে মাহিনুর বাসায় না গিয়ে মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় গিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে। একর্পায়ে মাহিনুরকে বিয়ে করবে বলে জানায় দেলোয়ার। এতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য মাহিনুর তাকে ২ হাজার টাকা দেয়। পরে রাত হয়ে যায়। জাহাঙ্গীর তাকে নিজের বাসায় নেবে বলে পরিত্যক্ত কোল্ডস্টোরেজে নিয়ে যায়। সেখানে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে জাহাঙ্গীর চলে যায়। পরে দেলোয়ার এসে জোরপূর্বক মাহিনুরকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এতে চিৎকার দিলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মাহিনুরকে দেলোয়ার হত্যা করে। পরে মরদেহ ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে তিনি পালিয়ে যান।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com