বরিশালের রানের পাহাড় টপকাল সিলেট

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২৩

স্পোর্টস ডেস্ক: বিপিএলে সিলেট একমাত্র দল যারা শিরোপা জেতা দূরের কথা, ফাইনালেই উঠতে পারেনি। এবার নতুন মালিকানায় সেই অপূর্ণতার সাগর পাড়ি দিতে শক্তিশালী দল গড়ে।

সেই লক্ষ্য পূরণে সিলেট প্রথম ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দুর্বল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দেওয়ার পর শনিবার (৭ জানুয়ারি) গতবারের রানার্সআপ ফরচুন বরিশালের সামনে ১৯৪ রান টপকানোর বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। কিন্তু মাশরাফির অদম্য সিলেট সেই রানের পাহাড় টপকে গিয়ে অনায়াসেই। তিন তরুণ তৌহিদ হৃদয় (৫৫) নাজমুল হোসেন শান্ত (৪৮ ও জাকির হাসানের (৪৩) মারুমখি ব্যাটিংয়ের সঙ্গে অভিজ্ঞ মুশফিকের ঝড়ে সিলেট জয় পায় ৬ উইকেটে।

বরিশালের ৭ উইকেটে করা ১৯৪ রান তারা অতিক্রম করে ১ ওভার হাতে রেখে ৪ উইকেটি হারিয়ে ১৯৬ রান করে।

এই চারজনের স্ট্রাইকরেট ছিল একশর অনেক উপরে। নাজমুলের (৪০ বলে ৪৮) ১২০.০০), তৌহিদ হৃদয়ের ১৬১.৭৬ ( ৩৪ বলে ৫৫) জাকিরের ২৩৮.৮৮ ( ১৮ বলে ৪৩) ও মুশফিকের ২০৯.০৯ ( ১১ বলে অপরাজিত ২৩ রান)।

বড় স্কোরিং ম্যাচে ছক্কা ছিল ১৮ ও চার ৩৭ টি। বরিশালের ইনিংসে ছক্কা ১০টি ও বাউন্ডারি ১৭টি। সর্বোচ্চ ছক্কা ও চার আসে সাকিবের ব্যাট থেকে যথাক্রমে ৪টি ও ৭টি। সিলেটের ইনিংসে ছক্কা ৮টি ও চার ২০। সবচেয়ে বেশি ছক্কা ছিল জাকিরের ৩টি। চার বেশি মারেন তৌহিদ হৃদয় ৭টি। ৩৯০ রানের ম্যাচে ২৫৬ রান এসেছে চার ও ছয় থেকে।

হাই স্কোরিং ম্যাচে মিস ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের এক অনন্য মহড়া ছিল। বরিশালের ইনিংসে কম হলেও সিলেটের ইনিংসে ছিল ভরপুর। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শৈত্য প্রবাহে কুয়াশার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াতে বরিশালের ফিল্ডাররা বল হাত রাখতেই পারছিলেন না। কঠিন ক্যাচও তারা যেমন ফেলেছেন, তেমনি সোজা হাতে যাওয়া ক্যাচও। হাত থেকে ছুটে গিয়ে এক রানের জায়গায় হয়েছে বাউন্ডারি।

বড় সংগ্রহের পেছনে ছুটে শুরুতেই ধাক্কা খায় সিলেট। মিরাজের করা প্রথম ওভারেই তারা হারায় ওপেনার কলিন অ্যাকারম্যানকে। মিড অন থেকে সৈয়দ খালেদ আহমেদের থ্রোতে তিনি রান আউট হয়ে যান ১ রানে। শুরুর এই ধাক্কা সিলেট কাটিযে উঠে নাজমুল ও ওয়ান ডাউনে খেলতে নামা তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটে। প্রথম ওভারেই কলিনকে হারানো তারা যেন নির্গাত ভুলে যান। সাকিবের ওভারে ৮ রান নিয়ে মিরাজের ওভারে চড়াও হন দুই জনেই। দুই জনেই একটি করে ছয় মেরে ১৫ রান তুলে নেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের পরের ৩ ওভারেও সিলেটের রান সংগ্রহের এই ধারা অব্যাহত থাকলে রান আসে যথাক্রমে এবাদতের ওভারে ১১, খালেদের ওভারে ১১, সাকিবের ওভারে ৬। ৬ ওভারে সিলেটের রান আসে ১ উইকেটে ৫৪। বরিশালেরও রান ছিল ৫৪। কিন্তু তারা কোনো উইকেট হারায়নি। সিলেটকে খেলায় রাখেন তৌহিদ হৃদয়।

এ সময় তার রান ছিল ১৯ বলে ৩৩। নাজমুলের রান ছিল ১৫ বলে ১৯। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে সাকিব তিনি নিজেসহ ৪ জন বোলার ব্যবহার করেন। ২ ওভার করে বোলিং করেন তিনি ও মিরাজ। সাকিব রান দেন ১৪, মিরাজ দেন ১৮।

এই দুই ব্যাটসম্যানকে থামাতে অধিনায়ক মিরাজ ১০ ওভারের মাঝেই অবিশ্বাস্যভাবে ৮ জন বোলার ব্যবহার করেন। এর মাঝে একমাত্র করিম জানাত ৩ রান দিয়ে কিছুটা রান নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন। তারপরও ১১ নম্বার ওভার করতে আসা কামরুল ইসলাম রাব্বির ওভারে ১৭ রান নিয়ে বরিশালের মতো সিলেটও ১১ ওভারে দলীয় শতরান পূর্ণ করে। একইসঙ্গে দুই জনে জুটিতে শতরান পূর্ন করেন ১১ (ইনিংসের ১১.২ ওভার) ওভারে। একে একে ৮ জন বোলার ব্যবহার করে জুটি ভাঙতে ব্যর্থ হওয়ার পরও সিলেটের জুটি ভাঙে সেই রান আউট থেকেই। জুটিতে শতরান আসার পরপরই সাকিবের বল নাজমুল মিডঅফ খেলেই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল সোজা চলে গিয়েছিল হায়দার আলীর হাতে। তিনি যখন বল উইকেটকিপার এনামুল হক বিজয়ের দিকে ছুড়ে মারেন, তখন সিলেটের দুই ব্যাটসম্যান একই প্রান্তে। আউট হয়ে যান নাজমুল। ২ রানের জন্য হন হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত। ৪০ বলে ১ ছক্কা ও ৫ চারে করেন ৪৮ রান।

নাজমুল হাফ সেঞ্চুরি না করে আউট হয়ে গেলেও তৌহিদ হৃদয় ৩০ বলে তুলে নেন বিপিএলে তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। ছক্কা ছিল ১টি, বাউন্ডারি ৭টি। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি করার পর তিনি আর বেশি দূর যেতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৫৫ রানে তিনি করিম জানাতের নিচে হয়ে আসা বল স্কুপ খেলতে গিয়ে মিস করলে এলবিডব্লিউর শিকার হন। জীবন পেতে রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তার ৩৪ বলের ইনিংসে ছিল ১টি ছক্কা ও ৭টি চার।

বরিশালের রান তাড়া করতে গিয়ে সিলেট সমান তালে এগিয়েছে। ১৫ ওভার শেষে বরিশালের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৩৯, সেখানে সিলেট এগিয়ে থাকে ৩ উইকেটে ১৪৫ রান করে। এবাদতের করা ১৬ নম্বারে ওভারে মুশফিকু ও জাকির চড়াও হয়ে ১৯ রান নিলে ম্যাচ সিলেটের মুঠোয় চলে আসে। খালেদের বলে জাকির ছক্কা মারতে গিয়ে মিডঅফে চাতুরঙ্গা ডি সিলভার হাতে ধার পড়ে আউট হন ৪৩ রানে। তার মাত্র ১৮ বলের ইনিংসে ছিল ৩ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারি। মুশফিকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাত্র ১৭ বলে যোগ করেন ৩৮ রান।

প্রথম, চার ব্যাটসম্যান যে রান ফুয়ারা তৈরি করেছিলেন, সেখানে এসে পাঁচ নেমে থিসারা পেরেরা আরও বেশি করে ঢেউ তুলেন। মাত্র ৮ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে তিনি অপরাজিত ২০ রান করলে সিলেট ১৯ ওভারেই জয়ের সন্ধান পেয়ে যায়। মুশফিকুর রহিম অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ১ ছক্বা ও ৩ চারে ২৩ রান করে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com