অব‌্যবস্থাপনার বিপিএল শুরু আজ

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৩

স্পোর্টস ডেস্ক: ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিবের দৃষ্টিতে বিপিএল যা-তা। সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা মনে করেন হ-য-ব-র-ল। দুইজনেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের লিজেন্ডারি। সাকিব তো বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের পোস্টার বয়। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে মাথা উঁচু করে বিশ্বে হেঁটে বেড়াচ্ছে, তার নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। এ রকম দুইজন ক্রিকেটার যখন বিপিএল নিয়ে এ রকম মন্তব‌্য করেন, তখন বোঝাই যায় বিসিবির কর্তাদের দৃষ্টিতে ‘আইপিএলের পরই বিপিএল স্লোগান’ শুধুই শুভংকরের ফাঁকি। ফাঁকা আওয়াজ। মিথ‌্যে বুলি। ক‌্যানভাসরের মতো কথার ফুলঝরিতে মানুষকে সন্তুষ্ট করার ব‌্যর্থ প্রয়াস।

সাকিব-মাশরাফির অপ্রিয় বচনই শেষ নয়। সঙ্গে আছে আরও নানা অসঙ্গতি। নেই ২২ গজের ময়দানে অতি জরুরি ‘ডিআরএস’। এই ডিআরএস ছাড়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভাবাই যায় না। ডিআরএস ছাড়া কোনো টুর্নামেন্ট মানেই সেটি পাড়া-মহল্লার টুর্নামেন্ট। এখানেই শেষ নয়। খেলা শুরুর দুই দিন আগেও একাধিক দল নিজ নিজ দলের ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জার্সি সরবরাহ করতে পারেনি।

ট্রফি উন্মোচন করতে এসে নাসির হোসেন নিজে জানালেন তিনি ঢাকা ডমিনেটরসের অধিনায়ক। টুর্নামেন্টের টাইটেল স্পন্সরের নাম আগের আসরগুলোতে যেমন শুরুর আগের দিন জানানো হতো, এবারও তাই করা হয়েছে। হোম অ‌্যান্ড অ‌্যাওয়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এমনবিক সে রকম কোনো লক্ষণও নেই। অতীতের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাকে দেওয়া হয়েছে প্রধান‌্য আর তিনটি ভেন্যুতে আটকা পড়ে আছে আসর।

এতো সব সমস‌্যা মাথায় নিয়েই আজ (শুক্রবার) মাঠে গড়াচ্ছে বিপিএলের সাত দলের অংশগ্রহণে নবম আসর। গতবার ছিল ছয় দলের আসর। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় মুখোমুখি হবে নতুন মালিকানায় মাশরাফির নেতৃত্বে সিলেট স্ট্রাইকার্স ও শুভাগত হোমের চট্টগ্রাম চ‌্যালেঞ্জার্স। দিনের দ্বিতীয় ম‌্যাচে মাঠে নামবে বর্তমান চ‌্যাম্পিয়ন ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও এক মৌসুম পর আবার ফিরে আসা বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকাধীন রংপুর রাইডার্স। খেলা শুরু হবে সন্ধ‌্যা সোয়া ৭টায়। শুক্রবার ছাড়া অন‌্যদিন খেলা শুরু হবে যথক্রমে বেলা ২টায় ও সন্ধ‌্যা ৭টায়।

বিপিএলের এসব সমস‌্যা নতুন নয়। প্রবর্তনের পর থেকেই সমস‌্যা জর্জরিত বিপিএলে। গত আট আসরেও এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি বিপিএল গর্ভনিং কাউন্সিলের। সমস‌্যা যেমন আছে, তার সমাধানও আছে। কিন্তু সেই সব সমস‌্যা সমাধানে খুব একটা আগ্রহী হতে দেখা যায় না বিপিএলের গর্ভনিং কাউন্সিলকে। ফ্রাঞ্চাইজিরা লাভবান হলেন কি না সেটা দেখার বিষয় নয়, দায়সারা গোছের আয়োজন করে তহবিলে টাকা ঢুকানোই যেন মুখ‌্য হয়ে উঠেছে বিপিএলের গর্ভনিং কাউন্সিলের।

এবারের বিপিএলের সমালোচনা শুরু ডিআরএস না রাখা নিয়ে। এলিমিনেটর ও কোয়ালিফায়ার রাউন্ড থেকে ডিআরএস রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু লিগ পর্বে কেন নয়? গত আসরেও এই সমস‌্যা ছিল। আয়োজকদের দাবি ডিআরএস চালানোর মতো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোকবলের অভাব। কিন্তু দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ হলে এই সমস‌্যা আবার হয় না। ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন টাকা বাঁচাতেই আয়োজকেদের এই টালবাহানা!

এমনিতেই বিপিএলে গত আট আসরে দাঁড়াতে পারেনি শক্ত ভিত্তির উপর। তারপর এবার পড়েছে বড় চ‌্যালেঞ্জের মুখে। আগের আসরগুলোতে যখন বিপিএল অনুষ্ঠিত হতো, তখন বিগব‌্যাশ ছাড়া বিশ্বে আর কোথায়ও তেমন একটা ফ্রাঞ্চাইজি আসর হতো না। এবার দুই দুইটি বড় আসর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে, অপরটি দক্ষিণ আফ্রিকাতে। দুইটিতেই টাকার ঝনঝনানি। নেপথ্যে রয়েছেন ভারতীয় ব‌্যবসায়ীরা। টাকার খেলায় তাই পিছিয়ে পড়ে বিপিএল। বিশ্ব ক্রিকেটের যে সব নামিদামী তারকাদের বিচরণ ক্ষেত্র ছিল বিপিএলে এবার তারা মুখ ফিরিয়ে নেন। ফলে বিশ্ব মানের তারকা ক্রিকেটারদের সংকটে পড়ে বিপিএলে। কিন্তু সেখানে তাদের উদ্ধার করে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। বলা যায় পাকিস্তানের জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটারকেই বিপিএলের বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি দলে ভিড়িয়েছে। তবে এখানেও আছে শুভংকরের ফাঁকি। কারণ শুরুতেই যেমন তাদের পাওয়া যাবে না, তেমনি শেষের দিকেও। কারণ পাকিস্তানের খেলা। বর্তমানে তারা ব‌্যস্ত আছে নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে। তারপরও মন্দের ভালো। এসব ক্রিকেটারদের দলে ভিড়িয়ে বিপিএলে বিদেশি তারকা ঘাটতি হতে দেয়নি!

পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের ছাড়া আর কোনো বিশ্ব মানের সেরকম তারকা ক্রিকেটার না থাকাতে এবারের আসর শুরুতেই খেয়েছে ধাক্কা। সেখানে আবার সাকিব-মাশরাফির মতো ক্রিকেটাররা বিপিএলে নিয়ে সমালোচনা করাতে নবম আসর নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহের ব‌্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে আজকের ম‌্যাচ নিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) টিকিট কাউন্টারে দর্শকদের সাড়া না দেওয়া।

বিপিএলের নানা ঘাটতির মাঝে গর্ভনিং কাউন্সিল কিছুটা প্রশংসনীয় কাজ করতে পেরেছে তিন বছরের জন‌্য ফ্রাঞ্চইজি দিয়ে। এতে করে আগামীতে হয়তো কিছুটা হলেও এর সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে প্রশংসনীয় কাজ ছিল এবার কোনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না করা। আগের প্রায় আসরগুলোতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা ব‌্যয় করা হতো।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com