উত্তরে আমিনুল আধিপত্যে পদত্যাগের মহোৎসব

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনে পদ বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ এনে পদত্যাগ করলেন অন্তত এক ডজন নেতা।

সাম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ১০ ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ্ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক এ কমিটির অনুমোদন দেন।

এরমধ্যে রূপনগর থানার ৬নং আঞ্চলিক ওয়ার্ড, শাহআলী থানার ৮ ও ৯৩নং ওয়ার্ড, কাফরুল থানার ৪নং ওয়ার্ড, আদাবর থানার ৩০ ও ১০০নং ওয়ার্ড, মোহাম্মদপুর থানার ৩১, ৩২, ও ৩৩নং ওয়ার্ড এবং বনানী থানার ১৯নং ওয়ার্ড।

এই কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মোহাম্মদপুর থানার ৩৩ নং ওয়ার্ডের অন্তত এক ডজন নেতা পদত্যাগ করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ওয়ার্ড সম্মেলন ঘিরে এলাকা প্রীতি এবং পদ বাণিজ্য হচ্ছে। যাদের বাড়ি ভোলা তাদের চাল চুলা কিছু না থাকলেও তারা কাউন্সিলে পাস করে যাচ্ছে। আবার যারা অর্থ দিচ্ছে তারাও কমিটিতে জায়গা পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক আমানুল্লাহ আমান এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পদত্যাগের মহোৎসব থামানোর জন্য আমিনুল হক হুমকি দামকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির নবগঠিত কমিটির যারা পদত্যাগ করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে- শামসুর রহমান শাহীন-২নং সহ সভাপতি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপি; মোঃ জাহাঙ্গীর-সহ সভাপতি, সাবেক সহ-হকার্স কল্যান বিষয়ক সম্পাদক মোঃপুর থানা বিএনপি; মোঃ কফিল উদ্দিন কফিল- কোষাধ্যক্ষ, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপি; মোঃ সালাউদ্দিন মৃধা-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক; মোঃ কামাল- সহ কোষাধ্যক্ষ, সাবেক সহ-প্রচার বিষয়ক সম্পাদক; মোঃ সোহাগ- সহ দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সদস্য আহবায়ক কমিটি; মোঃ লোকমান- সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সদস্য ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপি; মোঃ ইউসুফ- সদস্য ও সাবেক সদস্য ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপি, সাবেক সভাপতি ইউনিট বিএনপি; মোঃ মনির হোসেন পালোয়ান সদস্য ও সাবেক সদস্য ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপি আহবায়ক কমিটি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে ১০০নং ওয়ার্ড বিএনপির অন্তত আরও দুই ডজন নেতা পদত্যাগ করবে।

অভিযোগ রয়েছে অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার বাদলের সহযোগী মোল্লা কাউসারকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিট থেকে অন্তত ১৫ জনকে এনে ওয়ার্ডের সদস্য করা হয়েছে। যদিও ইউনিটের কারো ওয়ার্ডে আসার সুযোগ নাই।

৩২নং ওয়ার্ডের যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ বিল্লাল হোসেনকে একই ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানা কৃষকদলের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান ভিকুকে ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সাবেক সহ-হকার্স কল্যান সম্পাদককে ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি বানানো হয়েছে। অথচ নিয়ম করা হয়েছে থানা কমিটির কেউ ওয়ার্ড কমিটিতে আসতে পারবেনা।

৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া শাওন আহমেদকে স্বপনকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোথাও রাখা হয়নি। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী হাজী মোঃ মোস্তফাকেও কোন পদে রাখা হয়নি। ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সদ্য সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক কফিল উদ্দীন কফিলকে অবমূল্যায়ন করে নতুন কমিটিতে ক্যাশিয়ার বানানো হয়েছে। ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সদ্য সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কারা নির্যাতিত রজ্জব আলী সুমনকে অবমূল্যায়ন করে নতুন কমিটিতে সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। সাবেক সাংগঠনিক জহির হোসেন শাকিলকেও কোন পদে রাখা হয়নি।

এছাড়া ৩০নং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটিতে কারা নির্যাতিত নেতা সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হাসান জীবনের অনুসারী কাউকে কোন পদে রাখা হয়নি। এই ওয়ার্ড এর কমিটি গঠিত হয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়নপ্রাপ্ত কমিশনার আবুল কাশেমের ছোট ভাই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমেরিকা ফেরত স্বাধীনের নির্দেশে। অভিযোগ আছে আহবায়ক কমিটিতে বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে রাজনীতির মাঠে সম্পূর্ণ নিস্ক্রিয় স্বাধীনকে ১নং যুগ্ম আহবায়ক করা হয়।

৩১নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আহসান উল্লাহ শহীদের অনুসারী কাউকে কোন পদে রাখা হয়নি। ৩৪নং ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ফয়সাল ভূইয়া সোহেল, সভাপতি পদপ্রার্থী খাইরুল বাশার মুক্তি ও মহানগর বিএনপির সদস্য হাজী ইউসুফের অনুসারীদের কমিটিতে রাখা হয়নি। ২৯নং ওয়ার্ড এর সাবেক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী লিটন মাহমুদ বাবু, সাবেক সাধারণ আব্দুল কাদেরের অনুসারীদের কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

হাউজিং ব্যবসায়ী ও সাবেক সভাপতি এম এস আহমাদ আলী এবং বর্তমান সভাপতি মান্নান হোসেনের নির্দেশে ৩৩নং ওয়ার্ড কমিটি গঠিত হয়েছে। এছাড়া ২৯নং ওয়ার্ড কমিটি গঠিত হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ এনায়েতুল হাফিজের নির্দেশে। ওয়ার্ডের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

৩৪নং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠিত ঢাকা-১৩ আসনের এমপি সাদেক খানের ভাতিজা, মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক, বর্তমানে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুম খানের রাজেশের নির্দেশে। এই ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের বেলায় কাউন্সিলে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ভোট প্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদেরও অবমূল্যায়িত করা হয়েছে।

৩১নং ওয়ার্ড কমিটি গঠিত হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাবন্দী পিচ্চি হেলাল ও তার অনুসারী কমিশনার রাজু হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামী সদ্য জেল থেকে মুক্তি প্রাপ্ত পাপ্পুর নির্দেশে। পাপ্পুকে বিভিন্ন সমাবেশে দেখা গিয়েছে ৮০-৯০টি মোটরসাইকেল দিয়ে প্রটোকল দিতে ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুলকে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাদের হুমকি সহ ৩৩নং ওয়ার্ডের এক সম্পাদকের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ আছে এই পাপ্পুর বিরুদ্ধে।

২৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ওয়ার্ড সম্মেলন ঘিরে এলাকা প্রীতি এবং পদ বাণিজ্য হচ্ছে। যাদের বাড়ি ভোলা তাদের চাল চুলা কিছু না থাকলেও তারা কাউন্সিলে পাস করে যাচ্ছে। আবার যারা অর্থ দিচ্ছে তারাও কমিটিতে জায়গা পাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, কারা পদত্যাগ করেছে কিংবা আমাদের উপর অসন্তোষ হয়েছে আমরা সেই তথ্য পাইনি। আমাদের কাছে কোন অভিযোগও আসেনি। এরপরও যদি কেউ পদত্যাগ করে থাকে, আমাদের লিখিতভাবে জানায় তাহলে আমরা কারণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখব।

কমিটিতে প্রভাব ও অর্থ লেনদেনে জড়িত থাকা কিংবা তার ওপর অসন্তোস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল বলেন, অভিযোগ রাজনীতির বড় একটি অংশ। আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছে এটা সত্য নয় । যে বা যারা করছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট।

উল্লেখ্য, গত ২ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির মোহাম্মদপুর থানার ৫ টি ওয়ার্ড ২৯, ৩১,৩২,৩৩ ও ৩৪ কমিটির সন্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে কমিটি গঠনে পদ বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসময় বিক্ষুব্ধ একটা গ্রুপ প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালিয়ে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং সদস্য সচিব আমিনুল হককে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com