আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একইসঙ্গে মুখ রক্ষায় আগাম নির্বাচনেরও ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও বিষয়টি দেশটির রাজনীতিতে প্রবাল উত্তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেছেন, তার দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কিছু ভুল করেছে। অতীতের এসব ভুলের জন্যই এখন চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন–এর খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার লাহোরে পিটিআইয়ের এক সভায় ইমরান খান এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বলেন, দলের রাজনৈতিক দর্শন বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনে যোগ্য ও নিবেদিত নেতা–কর্মীদের মূল্যায়ন করবে পিটিআই।
ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা না থাকা নিয়ে চরম রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটি এড়াতে ভেঙে দেওয়া হয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগাম নির্বাচন। এর মাঝে নিজ দলের নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশে ইমরান খান বলেন, অতীতে আমাদের কিছু ভুল ছিল। সেসবের জন্য এখন চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। এখন আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। আগাম নির্বাচনের আগে প্রথম পদক্ষেপ হবে, যোগ্য ও দলের প্রতি অনুগত নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া।
পাকিস্তানের এখনকার সংকটের পেছনে বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ও বিদেশিরা এক হয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে সম্প্রতি ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। তবে গত রবিবার সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। এরপর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপদেশে বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন দাবি করে সর্বোচ্চ আদালতে গেছেন বিরোধীরা। তারা ইমরান খানের শাস্তি দাবি করেছেন। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানাননি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত।
ইমরান খান ও তার দলের লোকজনের দাবি, সরকার পতনের জন্য বিরোধীরা বিদেশিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তারা একটি দেশের হুমকির নথিও দেখিয়েছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইমরান খান সরকারের পতনের পেছনে ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তানের সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ানোর অভিযোগ এনে দেশটির নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উল্লেখ করেছেন, এটা কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখে না যে যুক্তরাষ্ট্র ‘অবাধ্য’ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শাস্তি দিতে চেয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইমরান খানের বিরোধীদের অর্থায়ন করে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তার সরকার পতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, ডন–এর খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের নাম প্রস্তাব করেছেন ইমরান খান। তার নাম প্রস্তাব নিয়ে অনেকে বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, গুলজারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার অর্থ পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকারই বিদ্যমান থাকা।