শিরোনাম
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার এপিএসের বিশেষ অঞ্চলপ্রীতি দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ বাড়বে ৯ নদীর পানি, ডুবতে পারে ৬ জেলার নিম্নাঞ্চল সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় লেনদেন ছাড়ালো ১২’শ কোটি গুমের মামলায় হাসিনা ও জিয়াউলের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ ৭১ ইস্যুতে ইসহাক দারের মন্তব্যে একমত নয় ঢাকা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগে বড় নিয়োগ সব নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ও পুলিশি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতমুখী সম্পর্ক চায় পাকিস্তান

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার এপিএসের বিশেষ অঞ্চলপ্রীতি দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : ধরা কে সরা জ্ঞান মনে করা আরও একজন এপিএসের খোঁজ পাওয়া গেছে। তার নাম নাজমুস সাদাত পারভেজ। কাজ করেন সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদের এপিএস হিসেবে। এপিএস হয়ে তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। এই আমলেও একটি বিশেষ জেলার পুরনো চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা-পদোন্নতি দেন। কাজ না করে সচিবালয়ের তদবিরবাজদের কাছ থেকে নানা উপঢৌকন নিয়ে গুপ্ত স্থানে লুকিয়ে রাখেন। সরকারি প্রকল্পে নিজের ঘনিষ্ট লোক বসিয়ে কামাই করেন। এমনকি বিদেশে গিয়ে বা কখনো সরকারি আমলাদের বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করে নিরাপদে লেনদেন ও ভাগ বাটোয়ারা চূড়ান্ত করেন।

পৈত্রিক সূত্রে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাসিন্দা এই এপিএসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যে তিনি মন্ত্রণালয়ে গোপালগঞ্জের প্রভাব ভাঙতে দেননি। মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। কর্মকর্তাদের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, ১০-১৫ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে ঢাকার সদর কার্যালয়ে কর্মরত কয়েক ডজন কর্মকর্তা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এই সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে জন্মসূত্রে গোপালগঞ্জের কর্মকর্তারা সবচেয়ে এগিয়ে। এদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই চক্রকে ভাঙতে অনেকবার মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। শুধু কি গোপালগঞ্জ চক্র? তিনি হাত দিতে দেননি আওয়ামীলীগের রেখে যাওয়া চক্রকেও। বদলি বা প্রত্যাহার তো দূরের কথা, অনেককে পদোন্নতি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে এবং করা হয়েছে বিভিন্ন বিভাগ-উপশাখার প্রধানও। ফলে স্থবির হয়ে আছে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো। এ নিয়ে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে।

তার ক্ষমতা এতটাই, যে মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন, সেই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জানতেই পারেন না তিনি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাকে নিয়োগ দিয়ে ফাইল স্বাক্ষর করেছেন। তার সাথে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কথা বলতে গেলে নিজেকে সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্মকর্তার কাজিন বলে পরিচয় দেন। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে জানা যায় কোনো এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সেনবাহিনীর ওই শীর্ষ কর্মকর্তা তার সঙ্গে একটি স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করেছিল। এতে তার সঙ্গে ঘনিষ্টতা বাড়ে। আর এই সম্পর্ককে পুঁজি করে তিনি গোয়েন্দা সংস্থাকে পর্যন্ত ভয় দেখান। ওই শীর্ষ কর্মকর্তা এ ঘটনায় বিবৃতবোধ করেছেন। মাস তিনেক আগে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুক টাইমলাইনে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় আলোচিত এই এপিএস বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যা একইসাথে অনৈতিক ও নজিরবিহীন। জানা গেছে, সেখানেও তিনি প্রভাব খাঁটিয়েছেন ওই সেনাবাহিনীর ওই শীর্ষ কর্মকর্তার কাজিন পরিচয়ে।

তার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি অধিদপ্তরে তিনি সেই বিশেষ এলাকার লোকজন বসিয়ে সেই অধিদপ্তর দীর্ঘদিন দখল করে রেখেছেন। কাউকে সেখান থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। আবার প্রবেশেও নিজের লোক ছাড়া কাউকে বসাতে চাচ্ছেন না। এমন প্রভাব তিনি এই আমলেও খাটিয়ে চলেছেন। সর্বশেষ গত মাসে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতির প্রস্তাবনায় আসে ১৪ জন কর্মকর্তার নাম। তার মধ্যে ৪ জনই একটি বিশেষ এলাকার। আর সারা বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মোট ১৬ জেলার মাত্র ১ জন পদোন্নতির যোগ্য বলে প্রস্তাব করা হয়। এতে তীব্র আঞ্চলিক বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। এই সময়ে এটা কীভাবে সম্ভব? এ ঘটনায় নাজমুস সাদাত পারভেজের সরাসরি হাত রয়েছে বলে জানা যায়।

তার আওয়ামীপ্রীতি সবার জানা। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান হিসেবে যাকে বসানো হয়েছে তার আপন বোন চাপাইনবাবগঞ্জের জেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া, ১৫ বছরের বেশি তিনি একই কার্যালয়ে চাকরি করছেন। তার বদলি হবার কথা থাকলেও তিনি হন নাই, উল্টো আরও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এরকম অনেক কর্মকর্তার সন্ধান পাওয়া যায় যেখানে ১০-১৫ বছরের অধিক সময় ধরে স্বপদে বহাল আছেন। তাদেরই আরেকজন টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন মোল্লা। তিনি ২০০২ সাল থেকে ঢাকায় কর্মরত। তাদের ওপর কোনো বদলির আদেশ হয় নাই। পতিত সরকারের আর্শীবাদপ্রাপ্ত বলে তাদের এমন সুবিধা দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের অনেকে মনে করে।

সম্প্রতি সমাজকল্যান মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া সচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের সকল শীর্ষ কর্মকর্তা একযোগে বিদেশে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সচিবের অবসরে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে বিদেশ সফরে পাঠানোর আয়োজন করে বিতর্কিত হন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। সেখানেও এপিএসের হাত ছিল বলে জানা যায়। কারণ ওই কর্মসূচিতে যারা অংশ নিয়েছে তাদের চূড়ান্ত করেছেন নাজমুস সাদাত পারভেজ নিজে। তাদের সঙ্গে একজন প্রকল্প পরিচালকও যান। যা ছিল অপ্রয়োজনীয়। ধারণা করা হয়, বিদেশে বসে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ওই প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে লেনদেন চূড়ান্ত করতেই এই একযোগের সফর। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়িত আইএসও প্রকল্পে কয়েকটি কম্পোনেনেটের কাজ পাইয়ে দেওয়া ছিল তাদের লক্ষ্য।

উপদেষ্টাকে না জানিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন নাজমুস সাদাত। এতে অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এসএসপিরিট প্রকল্পে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তিনি অযোগ্য। এর আগে আইএসও প্রকল্পেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে নাজমুস সাদাত। সেখানে বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনা ছিল রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা লোককে নিয়োগ দিতে হবে। এমন শর্ত থাকা প্রকল্পে তিনি কৌশলে উপদেষ্টার স্বাক্ষর নিয়ে অযোগ্য লোককে বসিয়ে দিয়েছেন। যার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই নাই।

আরও ভূরিভুরি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থায় প্রভাব বিস্তার ও দুর্নীতি। এমন একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আল নাহিয়ান ট্রাস্ট। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকাস্থ কার্যালয়ের একাউন্টেন্টের সাথে যোগসাজশ করে অধীনস্থ দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনার ভাড়া ভাগাভাগি করার অভিযোগও এসেছে। অভিযোগ এসেছে আল নাহিয়ান ট্রাস্টের লালমনিরহাট শাখার একজন কর্মকর্তাকে প্রশ্রয় দেয়ার, যিনি সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর পালিত পুত্র এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। আব্দুল হাকিম নামের সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন, অর্থ আত্মসাৎসহ বিস্তর অভিযোগের তথ্য পাওয়া গেছে পুরনো কিছু সংবাদে ও ভিডিওতে। কর্মস্থল থেকে জারি করা হয়েছিল কারণ দর্শানোর নোটিশও। তবু তাকে প্রত্যাহার করা যায়নি এপিএস নাজমুস সাদাতের প্রভাবে।

এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনী পরিচালিত সেনানিবাস প্রয়াস স্কুলে চাকরি দিয়েছেন নিজের বোনকে। এমন শত শত অভিযোগ নাজমুস সাদাতের বিরুদ্ধে।

নাজমুস সাদাত পারভেজের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের ওয়েভসাইটে প্রকাশিত নম্বরে গত কয়েকদিন যাবত তাকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিলে সেটি সব সময় বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর তার সঙ্গে সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি সেখানে অনুপস্থিত থাকেন। তার অফিসের কর্মকর্তা আব্বাস কে এ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। যোগাযোগের জন্য তার আর কোনো নাম্বার আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। আব্বাস বলেন তার ওই নাম্বার ছাড়া আর কোনো নাম্বার তার জানা নেই। তাকে যোগাযোগ করার জন্য সাংবাদিকের কার্ড দেওয়া হয়। আব্বাস সেই কার্ড তার হাতে তুলে দিয়েছেন বলে জানান। কিন্তু তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com