ভারতে স্কুলের অনুষ্ঠানে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখানো হলো বোরকা পরা ছাত্রীদের!

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

ভারতের গুজরাটের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে বোরকা পরা ছাত্রীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখানোকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ভাবনগরস্থিত ওই স্কুলে গত ১৫ই অগাস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একটি নাটক উপস্থাপন করেছিল শিক্ষার্থীরা। সেখানে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বোরকা পরা ছাত্রীদের দেখানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নাটকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। খবর বিবিসি বাংলার।

অনুষ্ঠানের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেখানে দেখা যায় খেলনা বন্দুক হাতে কালো রঙের বোরকা পরা কয়েকজন ছাত্রী অন্য ছাত্রীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিনয় করছে। পাঁচ মিনিট দু’সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশাত্মবোধক গান বাজতে শোনা যায়।

বিবিসি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওকে ঘিরে নতুনভাবে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতা জেলা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিতর্কের কারণ

ভাবনগর শহরের কুম্ভরওয়াড়া এলাকার যে স্কুলে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে সাদা পোশাক ও গেরুয়া ওড়না পরা ছাত্রীদের ওপর ‘সন্ত্রাসী’ সাজা ছাত্রীদের হামলা চালাতে দেখা যায়। যে ছাত্রীরা ওই নাটকে ‘সন্ত্রাসী’ সেজেছিল তারা বোরকা পরেছিল বলে অভিযোগ। স্কুলের ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকে আপত্তি প্রকাশ করেন। জেলা শাসকের কাছে অভিযোগও করেছেন তারা।

গুজরাটের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা জহুরভাই জেজা বলেন, ‘কুম্ভরওয়াড়া এলাকায় পুরসভা একটি স্কুল চালায়। সেখানে একটি নাটক উপস্থাপন করা হয়েছিল, যেখানে পর্যটক ও সেনাবাহিনীকে দেখানো হয়। ওই নাটকে মেয়েদের বোরকা পরিয়ে সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করিয়ে মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানো হয়েছিল।’

ঘটনার জন্য স্কুলের প্রিন্সিপাল ও অন্যান্য শিক্ষকদের দায়ী করেছেন তিনি। তার কথায়, ‘নিষ্পাপ শিশুদের দিয়ে এই সমস্ত করে এরা দেশকে ভাগ করার চেষ্টা করেছে। মুসলমানদের বদনাম করার জন্য যেভাবে বোরকার ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তার বিরোধিতা করছি। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

প্রিন্সিপাল কী বলেছেন?

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন স্কুলের প্রিন্সিপাল রাজেন্দ্র কুমার দাভে। তিনি বলেন, ‘এটি বালিকা বিদ্যালয়। আমরা প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস পালন করি। এইবার অপারেশন সিন্দুর শীর্ষক নাটক উপস্থাপন করা হয়েছিল। বাচ্চাদের পোশাকে যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি থেকে থাকে এবং তা নিয়ে কোনো সম্প্রদায়ের যদি কোনোরকম আপত্তি থাকে, তাহলে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র অপারেশন সিন্দুর-এর সাফল্য সম্পর্কে শিশু ও অভিভাবকদের অবহিত করা, কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা কখনোই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।’

শিক্ষা কর্মকর্তারা কী বলছেন?

ভাবনগর প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির এডুকেশন অফিসার মুঞ্জল বডমিয়া বলেন, ‘১৫ই অগাস্ট শহরের প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির স্কুলগুলিতে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। সেখানে বাচ্চারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেছিল।’

ওই ঘটনার বিষয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের তরফ থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। স্কুলের প্রিন্সিপালকে একটি নোটিস পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে এবং কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com