এ মাসের মধ্যে ৭৫ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা প্রদান

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২

ঢাকা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সত্ত্বেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে এ মাসের মধ্যে সরকার ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৭৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দিতে চায়। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে পারবে।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগামীকাল বুধবারের পর টিকা ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারবে না।

পরে টিকাদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের তালিকা মাউশিতে এসেছে। এই তালিকা টিকা নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। এখন নির্ধারিত দিনে শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে টিকা নিতে পারবে।

করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়েছিল। টানা প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু ফের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে গত রবিবার রাতে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ শিক্ষা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে না। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে সীমিত পরিসরে চলছে, সেভাবেই চলবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে।

গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পর টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবারের (১২ জানুয়ারি) পর করোনার টিকা ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারবে না। তবে যাদের টিকা দেওয়া হয়নি, তারা আপাতত অনলাইনে বা টেলিভিশনে যে ক্লাস হয়, সেগুলোয় অংশ নেবে। সবার অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়া হলে সবাই সশরীর ক্লাস করবে।

অবশ্য টিকাদানের নির্ধারিত সময়ের আগে শ্রেণিকক্ষে টিকা সনদের বাধ্যবাধকতা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বৈষম্যবোধ কাজ করতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ। কারণ, টিকা দেওয়ার কাজটি হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। শিক্ষার্থীরা চাইলেও কোথাও গিয়ে টিকা নিতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ৩১ জানুয়ারি মধ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় চাইলে ওই সময়ের পর শিক্ষার্থীদের টিকা সনদের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি কার্যকর করতে পারে।

মূলত ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষকে টিকা দিয়ে আসছিল সরকার। পরে সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় গত বছরের পয়লা নভেম্বর থেকে ১২ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু করে। শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী মোট শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ শিক্ষার্থী। বাকি ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থীর এখনো প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া বাকি আছে।

এখন সব শিক্ষার্থীকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার কর্মসূচি নিল সরকার। এর মধ্যে ৩৯৭টি উপজেলা বা থানায় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে, ৩ উপজেলায় ১৭ জানুয়ারির মধ্যে, ৫৬ উপজেলা বা থানায় ২০ জানুয়ারির মধ্যে, ১৫ উপজেলা বা থানায় ২২ জানুয়ারির মধ্যে, ৩৫ উপজেলা বা থানায় ২৫ জানুয়ারির মধ্যে এবং ১১ উপজেলা বা থানায় ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ওই বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ হবে।

এ সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া সম্ভব কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক কমিটির সদস্যসচিব মো. শামসুল হক গতকাল বলেন, আলোচনা করেই সময়সূচি ঠিক করা হয়েছে। তারা আশা করছেন, এই সময়ের মধ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকে টিকাদান শেষ করা যাবে।

১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সীদের কী হবে, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১২ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো অনুমতি দেয়নি। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তের জন্য সরকার অপেক্ষা করবে।

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করছে এবং এখনো কোথাও সংক্রমণের তথ্য পায়নি। কাজেই আপাতত ক্লাস চালিয়ে যাবে। একই সঙ্গে পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করা হবে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com