ভালোবাসা, আস্থা ও বোঝাপড়ার ওপর ভর করেই গড়ে ওঠে বিবাহিত দম্পতির সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের নিজস্ব কিছু ভেতরের গল্প থাকে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর ভেতরের কথা বাইরে চলে যায় বন্ধু কিংবা পরিবারের কাছে। তাতে ক্ষতি হয় সম্পর্কের ভরসার।
মনোবিজ্ঞান বলছে – প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কেরই কিছু সীমারেখা আছে, যা অতিক্রম করলে বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যায়। যেনে নিন দাম্পত্যের কোন কোন বিষয়গুলো তৃতীয় ব্যক্তির জানা উচিত নয়।
১. সঙ্গীর দুর্বলতা কখনো শেয়ার করবেন না
যদি আপনার সঙ্গী আপনাকে কোনো ভয়, অনিশ্চয়তা বা ব্যক্তিগত সমস্যা বিশ্বাস করে বলেন, তবে তা কারও সঙ্গে শেয়ার করা উচিত না। কারণ, এগুলো অন্যের কানে গেলে সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস ভেঙে যেতে পারে। গবেষকরা একে বলেন ‘আবেগীয় নিরাপত্তার লঙ্ঘন’, যা সম্পর্কের ভেতরে ভরসাহীনতা তৈরি করে।
২. ঝগড়ার গল্প বাইরে বলা ঠিক নয়
প্রতিটি দম্পতির জীবনেই ঝগড়া হয়। কিন্তু সেই অভ্যন্তরীণ তর্ক বা মনোমালিন্য বাইরে বললে বন্ধু বা পরিবারের চোখে আপনার সঙ্গীর নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়। পরে ঝগড়া মিটলেও সেই খারাপ ধারণা থেকে যায়। মনোবিজ্ঞানে এটাকে বলে ‘কনফার্মেশন বায়াস’।
এমন অবস্থায় অন্যরা কেবল আপনার সঙ্গীর নেতিবাচক দিকটাই দেখতে থাকবে। আপনাদের ঝগড়া মিটে গেলেও তারা এটা মনে রেখে দেবেন।
৩. টাকার ব্যাপারে বাড়তি সাবধানতা
আপনার সঙ্গীর আয়, ঋণ বা খরচের বিষয়ে কোনো তথ্য অন্যকে জানানো ঠিক নয়। কারণ টাকার ব্যাপারটা খুবই সংবেদনশীল। আর্থিক তথ্য ফাঁস হলে সঙ্গীর সম্মান ক্ষুণ্ণ হতে পারে, যা সম্পর্কেও অশান্তি ডেকে আনে।
৪. অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ব্যক্তিগত থাকুক
বিবাহিত জীবনের কিছু মুহূর্ত শুধুই আপনাদের দুজনের জন্য। শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বা প্রাইভেট কথাবার্তা অন্যকে জানালে সেটা সম্পর্কের ভেতরের আস্থা ও সম্মানকে নষ্ট করে।
৫. অতীতের ব্যক্তিগত ঘটনা বা পারিবারিক গোপনীয়তা
অনেক সময় সঙ্গী আপনাকে অতীতের কোনো কষ্ট বা পারিবারিক আঘাত শেয়ার করে থাকেন। এগুলো বাইরে বললে সেটি শুধু বিশ্বাসঘাতকতা নয়, বরং সম্পর্কের ভিত্তি নষ্ট করে দেয়।
গোপনীয়তা নাকি প্রাইভেসি?
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, গোপনীয়তা বা সিক্রেসি আর ব্যক্তিগত পরিসর বা প্রাইভেসি এক জিনিস নয়। প্রাইভেসি মানে হলো ব্যক্তিগত সীমারেখা বজায় রাখা, যা সুস্থ সম্পর্কের জন্য দরকারি। সিক্রেসি মানে হলো ইচ্ছে করে তথ্য লুকানো, যা অনেক সময় সম্পর্কের ভরসা কমিয়ে দেয়।
তাই সঙ্গীর সঙ্গে যত খোলামেলা থাকবেন, সম্পর্ক তত মজবুত হবে। তবে বাইরের মানুষের কাছে সব খুলে বলার প্রয়োজন নেই।
প্রতিটি দাম্পত্য জীবনেই ঝড়-ঝাপটা থাকে। কিন্তু সম্পর্কের ভেতরের সমস্যাগুলো বাইরের মানুষকে বলার আগে ভেবে দেখুন – এতে কি সম্পর্কের আস্থা নষ্ট হবে? প্রয়োজনে পেশাদার কাউন্সেলরের সাহায্য নিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য সান, ভেরিওয়েল মাইন্ড, মেরি জো রাপিনি