শেখ মুজিবের মূল্যবান ব্রোঞ্জের মুর‌্যাল ভাঙার হিসাবে গড়মিল, বেতারের ডিজি-পিডি নিচ্ছেন না দায়

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গত এক বছরে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে রদবদল হয়েছে। পতিত স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসরদের সরিয়ে প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রায় চারমাস পর বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান এ এস এম জাহিদ। তবে তিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রেস উইং এর সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ বেতারের মূল ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবর রহমানের ভেঙে ফেলা ম্যুরালের ব্রোঞ্জের হিসাবে গড়মিলসহ বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ডিজি জাহিদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তিনি (ডিজি) ও তার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তার নাম জড়িত রয়েছে। এরইমধ্যে এ বিষয়ে বেতারের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে তথ্য উপদেষ্টা বরাবর একটি অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে।

ডিজি জাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ম্যুরালের কিছু অংশ নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে রাতের আধারে লোপাট করা হয়েছে। ফলে লাখ লাখ টাকার ব্রোঞ্জ ডিজি আত্মসাৎ করেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে যার সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হয়নি।

ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ বেতারের মূল ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবর রহমানের ব্রোঞ্জের ম্যুরালের কিছু অংশ নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে রাতের আধারে লোপাট করা হয়েছে। ফলে লাখ লাখ টাকার ব্রোঞ্জ ডিজি লোপাট করে, যা ইচ্ছাপূর্বক সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হয়নি।

অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, আগারগাঁও বেতার অফিসের ৩-৪টি গাড়ি ও কল্যাণপুর বেতার অফিসে ৪-৫টি পুরাতন গাড়ি (যার ইঞ্জিনসহ সম্পূর্ণ অংশ) মহাপরিচালক তার নিজের সকল দুর্নীতির তত্ত্বাবধায়ক বেতারে কর্মরত মনিটরিং পরিদপ্তর শাখায় কর্মরত সামান্য অনিয়মিত শিল্পী জনাব ইমনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিক্রি করে ফেলে। এক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকার ৮-১০টি গাড়ি নামে মাত্র মূল্য দেখিয়ে অকেজো মালামাল হিসেবে উল্লেখ করে ব্যাক ডেটে নিলাম অনুমোদন দেখানোর চেষ্টা করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ বেতার, সদর দপ্তরের বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল অকেজো দেখিয়ে, এমনকি দপ্তরের জেনারেটর সহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ অকেজো দেখিয়ে নাম উল্লেখ না করে বিক্রি করে দেয়।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো- সবশেষ ঈদুল আজহায় সাভারের রেডিও কলোনী আবাসিক এলাকার বাংলাদেশ বেতারের সীমানা প্রাচীর ভেঙে সেখানে অবৈধভাবে গরুর হাট বসানোর চেষ্টা করা।

যদিও এসব অভিযোগগুলো তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী কাজের কোনও অগ্রগতি দেয়া যায়নি। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব মাহবুবা ফারজানা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

ডিজি জাহিদ বলেন, সে আমার ব্যাচমেট না! সে তো আমার ব্যাচম্যাট। ও তো খুব কনর্সান। কারণ আমরা তো অনেক আগে থেকে পরিচিত। ওর স্বামী হলো নাজমুল। আমরা এক সঙ্গে মাননীয় প্রধামন্ত্রীর দপ্তরে কাজ করতাম।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আাইনজীবী ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এ বিষয়ে বলেন, এস এম জাহিদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে শিল্পীরাও দুদকে অভিযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দুদক থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমিও শিল্পীদের পক্ষ থেকে একটি নোটিশ দিয়েছিলাম। সেটিও অদৃশ্য কোনো শক্তির কারণে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একজন ফ্যাসিস্ট সরকারের এতো বড় গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকা রাষ্ট্রের জন্য হুমকির।

শেখ মুজিবুর রহমানের মুর‌্যালের ব্রোঞ্জ লোপাটের অভিযোগে সরেজমিনে বাংলাদেশ বেতারে গেলে শুরু হয়ে যায় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের লুকোচুরি। প্রায় ১৫ টনের এই মুর‌্যালের প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে ছয় কোটি টাকারও বেশি। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে সেটি ভেঙে ফেলেন বেতার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ব্রোঞ্জ নির্মিত মুর‌্যাল ভাঙার পরই কিছু অংশ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠে ডিজি জাহিদ ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রধান ইঞ্জিনিয়ার প্রবাল কান্তি দাশের বিরুদ্ধে।

ব্রোঞ্জ লোপাটের অভিযোগটি প্রবাল কান্তি দাশের সামনে তুলে ধরলে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের ব্রোঞ্জ তৈরির প্রজেক্টে আমার দায়িত্বে সম্পন্ন হয়েছে। যারা তৈরি করেছে তারা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই সরকার পতন ঘটে। তাই সেটি ভেঙে ফেলতে হয়েছে।ভাঙার পর ১৪ হাজার কেজির কিছু বেশি ব্রোঞ্জ আমাদের কাছে মজুদ আছে এবং সেগুলো একটি কক্ষে সিলগালা করে রাখা আছে।

যদিও মুর‌্যালটির ওজন ছিল প্রায় ১৫ হাজার কেজি। তবে ভেঙে ফেলার পর বর্তমানে ১৪ হাজার কেজিরও বেশি ব্রোঞ্জ রয়েছে বলে দাবি করা হলেও, অবশিষ্ট অংশ কোথায় গেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি বাংলাদেশ বেতারের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এছাড়া ‘বর্তমানে ১৪ হাজার কেজিরও বেশি ব্রোঞ্জ রয়েছে’ এমন দাবি প্রমাণে কোনো দালিলিক প্রমাণও দেখাতে পারেননি তিনি।

প্রবাল কান্তি দাশ বলেন, এ বিষয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান)আনোয়ার হোসেন মৃধা। ওনার কাছেই বিস্তারিত তথ্য পাবেন। যদিও তিনি নিজেই ওই কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য, প্রতিবেদনের কোন কপি আমাকে দেয়া হয়নি। কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন মৃধার কাছে গেলে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।

কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার মৃধার কাছে সেই প্রতিবেদনের কপি চাইলে তিনিও কোনো প্রকার প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরদিন একটি ‘মব’ এসে ভাঙচুর করেন। পরে আমার নিজেরাই ভেঙে নিয়ে আসি এবং একটি কক্ষে সিলগালা করে রাখি।

বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশ ভেতারে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত কোনো প্রকার মব সৃষ্টি হয়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে হামলা হলেও নিরাপদে ছিল বাংলাদেশ বেতার।

এ বিষয়ে ডিজি জাহিদ বলেন, ৫ আগস্ট আমাদের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়াকে (বর্তমানে ওএসডি) বলছি স্যার আপনি চলে যান। ওই সময় এক আর্মি অফিসার এসে আমাকে বলেছেন এখানে হেড কে? তখন আমি বললাম আমিই এখানকার হেড। তখন ওই অফিসার দ্রুত আমাকে মুর্তিটি ভাঙতে বলে। যদি না ভাঙেন তাহলে জণগণ আসবে। আমরা কিন্তু তখন ঠেকাতে পারবো না। তখন আমি দয়িত্ব নিয়ে প্রবল বাবুকে ডাকলাম, তাকে বললাম দ্রুত এটা ভেঙে ফেলেন।

তারপর আর্মির পরামর্শে দআমি আমার লোকজোন লাগিয়ে দ্রুত নিচের বেজম্যান্ট, টাইলস ভাঙা শুরু করলাম। সেদিন কিন্তু আমরা মুর্তি ভাঙতে পারি নাই। তবে আমরা এমন ভাব করেছি যে মুর্তিটা ভাঙা হচ্ছে।

পরে পিডি প্রবল বাবু বা অন্য কেউ মুর্তিটাকে কাটলো। কে কেটেছে আমি জানি না। কেটে মুর্তির ব্রোঞ্জগুলো নিচে ফেলে রেখেছে। যার পরিমাণ হবে ১৪ টন ৩০০ কেজির মতো, যুক্ত করেন জাহিদ।

তিনি বলেন, আমাদের পিডি (প্রবাল কান্তি দাশ) অনেক চালাক, বড় ইঞ্জিনিয়ার তো। পিডি হতে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। পিডির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন বা না করো, এই পিডি এতো সহজে পার পাবে না। এতো সহজে ছাড়া হবে না। আপনি কি ভেবেছেন এটা বেতারের জিনিস, যে পার পেয়ে যাবেন।

এরপর বেতারের ডিজির কাছে একই তথ্য বা দালিলিক প্রমাণ চাইলে তিনিও আমাদের চার দিন পরে যেতে বলেন বেতারে। তিনিও কোনো প্রকার লিখিত কাগজ বা ব্রোঞ্জের সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তিনি প্রতিবেদন না দিয়ে বরং পিডি প্রবাল কান্তি দাশ এবং আনোয়ার মৃধার উপর দায় বর্তান। বলেন, ‘আমিও কোন প্রতিবেদন পাইনি।’

কিন্তু ডিজির দায়িত্বে থেকে আপনি এ দায় এড়াতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ডিজির দায়িত্ব নেয়ার আগে আমি মানসিকভাবে বেশ ভালো ছিলাম। এ দায়িত্ব নেয়ার পর অনেক ধরনের ঝামেলা মধ্যে রয়েছি। যে বিষয়ে দায়িত্ব নেয়ার কথা প্রকল্প পরিচালকের সেখানে সব বিষয়ে আমার উপর দায় আসছে।

ব্রোঞ্জ মাপা এবং সংরক্ষণের সাত সদস্যের কমিটিতে ছিলেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টার (বিটাক) উপ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। তার কাছে এই সংক্রান্ত তথ্য চাইলে তিনি প্রথমে আমাদেরকে ব্রোঞ্জ বিষয়ক তথ্য প্রদান এবং লিখিত প্রমাণ দেখানোর কথা শিকার করেন। পরবর্তীতে তিনি বলেন, আমি অফিসের বাইরে আছি। এ মূহুর্তে আমার কাছে প্রতিবেদনটি নেই। আগামীকাল অফিসে আসেন। তবে যাওয়ার পর তিনি প্রতিবেদন দিতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, ব্রোঞ্জ মাপার পর যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সে প্রতিবেদন কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার মৃধার কাছে আছে। সেই প্রতিবেদনে আমার স্বাক্ষর রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত ব্রোঞ্জ সংরক্ষণে রাখার সঠিক কোনো তথ্য, প্রমাণ দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ বেতারের ডিজি জাহিদ, পিডি প্রবাল কুমরা, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার মৃধা ও বিটাকের উপ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।

এছাড়া বাংলাদেশ বেতারের গোপালগঞ্জ ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রের বার্তা বিভাগে অনিয়মিত শিল্পী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে ২০২২ সালে ৪৬ জন অনিয়মিত শিল্পীকে কোনো ধরনের অডিশন ছাড়াই চুক্তিবদ্ধ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রত্যেক শিল্পীর কাছ থেকে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হয়, যার অধিকাংশ লেনদেন হয়েছে নগদে এবং কিছু সরাসরি বাংলাদেশ বেতারের আগারগাঁও, সাবেক ডিডি মো. জাকির হোসেনের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়।

জাকির হোসেনের ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাকিরের দুটি একাউন্টে ৩২ মাসে জমা হয়েছে এক কোটি ২৮ লাখ টাকা, যার বড় অংশ এসেছে বেনামি উৎস থেকে। একই সময় তিনি ৩৫১ বার এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন।

ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়া এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় । তারা জানিয়েছেন, চাকরির বিনিময়ে কেউ দিয়েছেন তিন লাখ, কেউবা পাঁচ লাখ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, এসব টাকা নগদে নেওয়া হয়েছে এবং জাকিরের নাম ব্যবহার করে তা আদায় করা হয়েছে।

এদিকে গত ঈদুল আজহায় ঢাকার সাভার পৌর এলাকায় ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে সরকারি আবাসিক এলাকার (সাভার রেডিও কলোনি) জমিতে অবৈধভাবে পশুর হাট বসানোর অভিযোগ উঠে ডিজি জাহিদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনে পাল্টাপাল্টি আবেদনের কারণে হাটটি উচ্ছেদ করা হয় হয়।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য এ বছর পৌর এলাকায় একটি হাটের ইজারা দেয়া হয়েছিল। ইজারার শর্ত অনুযায়ী, পৌর এলাকার গেন্ডা বালুর মাঠে হাট বসানোর কথা। কিন্তু ইজারাদার হাট বসিয়েছেন পৌরসভার রেডিও কলোনি এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে বাংলাদেশ বেতারের আবাসিক এলাকায় মধ্যে। এ জন্য বেতারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক এলাকার একটি প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়।

এ বিষয়ে ইজারাদাররা বলেন, বেতারের পক্ষ থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই ইজারাদার কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। নির্ধারিত জায়গার পরিবর্তে অন্য জায়গায় অবৈধভাবে পশুর হাট বসানোর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার জেলা প্রশাসক অবৈধ হাটটি উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আবাসিক এলাকার প্রাচীর ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, তারা আমাদের না জানিয়ে ভেঙেছে। পরে তারা নিজেরাই আবার দেয়াল তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু সরকারি আবাসিক এলাকার দেয়াল বেতারের অনুমতি ছাড়া ভাঙার পরেও কেনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এমন প্রশ্নের কোন উত্তরও দিতে পারেননি বেতারের এ মহাপরিচালক। তিনি হেসে বলেন, ‘এভাবে প্রশ্ন করা হলে আমার তো কোনো উত্তর থাকে না’।

সার্বিক বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার যেকোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব অনুযায়ী উপযুক্ত পদে নিয়োগ দিতে পারেন, তবে সেই পদায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বিষয়টি বাংলাদেশ বেতারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, তখন নিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অতীত কর্মকাণ্ড ও অভিযোগসমূহ খতিয়ে দেখা জরুরি।

তিনি বলেন, কাউকে এমন দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়ার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা উচিত। যদি তার বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অভিযোগ থাকে, তা হলে তা তদন্ত করে দেখা জরুরি। কারণ একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সরকারের পক্ষে সুবিধা নিচ্ছেন এবং দিচ্ছেন- তাই তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, এই ধরণের দায়িত্বপূর্ণ পদে কেউ যদি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তবে তদন্তসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। দায়িত্বশীল পদে থেকে কেউ যদি ব্যক্তিস্বার্থে প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেন, তা কখনোই মেনে নেয়া যায় না।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com