ঢাকা: রাজধানীর পৃথক চার মামলায় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীরসহ বিএনপির ১৯৯ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে গত ৯ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৩০ মামলায় বিএনপির ৫৪৬ নেতাকর্মীকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানার মামলায় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ১২ জনকে সাত বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১০ এর বিচারক মামুনুর রহমান সিদ্দিকী এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডিত উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন আনোয়ার, হায়দার আলী বাবলা, ইমরান, সেন্টু ও নাসুম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৮ মার্চ ঢাকার কোতোয়ালি থানার বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে হরতাল সফল করতে ককটেল বিস্ফোরণ করে আসামিরা। এতে রিকশাচালক কামাল হোসেন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নাজিম উদ্দীন ২০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বিচার চলাকালীন আদালত ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
যুবদলের জাহাঙ্গীরসহ ৭৫ জনের সাজা: রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীরসহ ৭৫ জনকে পৃথক তিন ধারায় আড়াই বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুজনকে খালাস দেন আদালত। এর আগে কারাগারে আটক জাহাঙ্গীরসহ তিনজনকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। তবে অন্য ৭৩ আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাজা কার্যকর হবে না বলে উল্লেখ করেন বিচারক।
নাশকতার অভিযোগে ২০১৩ সালের নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় এ মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে পুলিশ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়।
লালবাগ থানার মামলায় বিএনপির ৫০ জনের সাজা: রাজধানীর লালবাগ থানার মামলায় পৃথক দুই ধারায় বিএনপির ৫০ জন নেতাকর্মীকে ৩ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায় তিন মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৪ জনের খালাস দেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন হাজি আলতাফ হোসেন, মোশারফ হোসেন ওরফে কালা খোকন, জামালুর রহমান চৌধুরী, শফিউদ্দিন আহমেদ সেন্টু, মো. সাইদুল ইসলাম, জিয়ার আলী তাইয়্যন, সাঈদ হোসেন সোহেল ওরফে ক্যাপ সোহেল, হাজি ফয়সাল, আরমান হোসেন বাদল, মো. জুম্মন, ফয়সাল আহম্মেদ, মো. তাজু, মো. রাসেল, রমজান আলী, মো. জিয়া, তাসাদ্দেক হোসেন বাবলু, মো. শাসীম ও মুজিবুর রহমান।
নাশকতার অভিযোগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে রাজধানীর লালবাগ থানায় এ মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে পুলিশ ৭৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়।
বংশাল থানার মামলায় ৬২ নেতাকর্মীর সাজা: রাজধানীর বংশাল থানার মামলায় বিএনপির ৬২ নেতাকর্মীকে পৃথক দুই ধারায় সাড়ে তিন বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী এ রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাদের অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
নাশকতার অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বংশাল থানায় এ মামলা করা হয়।
জামিন পেলেন বিএনপির ৩ কেন্দ্রীয় নেতা : প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পৃথক দুই মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী এবং যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এ আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে এ-সংক্রান্ত আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৭ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাদের আগাম তিন সপ্তাহের জামিন দেন। একই সঙ্গে তিন সপ্তাহ শেষে মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।