অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডের দিনে হারল পাকিস্তান

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩

ক্রীড়া ডেস্ক: এর আগে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয ম্যাচে রেকর্ড ৩৪৪ রান তাড়া করে জয় তুলে নিয়েছির পাকিস্তান। আজও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের দুই ওপেনারের জোড়া হাফ সেঞ্চুরি জেগে সবাই ভেবেছিলো আজও রেকর্ড গড়ে জয় তুলে নেবে পাকিস্তান। কিন্তু অজি বোলারদের বোলিং তোপে ৪৫ ওভার ৩ বলে সব উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রান তুলতে সক্ষম হলো পাকিস্তান। আর অস্ট্রেলিয়া তুলে নিলো ৬২ রানের জয়।

অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া পাহাড়সম ৩৬৮ রানের লক্ষে ব্যাট করতে উড়ন্ত শুরু করে পাকিস্তান। আজ ওপেনার আজ তুলে নেন জোড়া অর্ধ শতক। এই জুটিকে স্বপ্ন দেখছিলো পাকিস্তান। কিন্তু এই জুটির বিদায়ের আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান চেষ্টা করলেও অন্য প্রান্তে তখন আসা যাওয়ার মিছিল। শেষে তিনিও ৪৬ রানে ফিরে যান সাজঘরে। জয়ের স্বপ্ন দেখো পাকিস্তানের ইনিংস থামে ৩০৫ রানে। ভারতের কাছে বড় হারের পর এবার তারা অস্ট্রেলিযার কাছেও হারলো।

পাকিস্তানের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামা আবদুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল হক শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন। এই জুটিতে ভর করে পাকিস্তান ৮ ওভার ২ বলে দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে আর প্রথম পাওয়ার প্লেতে তুলে নেয় ৫৯ রান। আর দলীয় শতক তুলে নেয় ১৬ ওভার ৫ বলে।

এরই মাঝে ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন আবদুল্লাহ শফিক। ৫২ বলে ৫০ রান করেন তিনি। এর মধ্যে ৪ মারেন ৫ টি আর ছক্কা হাঁকান ২টি।

আবদুল্লাহ শফিকের পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আরেক ওপেনার ইমাম-উল হকও। ৫৪ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ৮টি চারের মার।

মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা জশ হ্যাজেলউড, প্যাট কামিন্স ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল চেষ্টা করেও ভাঙতে পারছিলেন না এই জুটি। অস্ট্রেলিয়ার জন্য ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলো এই জুটি।

অবশেষে মার্কাস স্টয়নিস ভাঙেন এই জুটি। ৬১ বলে ৬৪ রান করা আবদুল্লাহ শফিককে ফেরান তিনি। তারা বিদায়ে ১৩৪ রানে ভাঙে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি।

আবদুল্লাহ শফিকের পর মার্কাস স্টয়নিসের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান আরেক ওপেনার ইমাম-উল হকও। ৭১ বলে ৭০ রান করে মিচেল স্টার্কের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।

১৫৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় পাকিস্তান। রান তোলার গড় কমতে থাকে। এসময় বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।

কিন্তু এই জুটি বেশিদূর যেতে পারেনি। দলীয় ১৭৫ রানে বাবর আজমের বিদায়ের পর ভেঙে যায় এই জুটি। ১৪ বলে ১৮ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি। এই জুটি থেকে আসে ২১ রান।

১৭৫ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তান দলের হাল ধরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিল। এই জুটি দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।

কিন্তু দলীয় ২৩২ রানে সৌদ শাকিলের বিদায়ের পর ভেঙে যায় এই জুটি। ৩১ বলে ৩০ রান করে প্যাট কামিন্সের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। ২৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের জয়ের আশা কিছুটা ক্ষিণ হতে থাকে। এর মাঝেই ইফতিখার আহমেদকে নিয়ে জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।

কিন্তু এই জুটিও বেশি সময় টিকতে পারলো না। অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ইফতিখার আহমেদ ফিরে গেলে ভেঙে যায় এই জুটি। আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ২০ বলে ২৬ রান।

ইফতিখার আহমেদের পথ ধরে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান ও উসামা মীর। হাফ সেঞ্চুরির আশা জাগানো মোহাম্মদ রিজওয়ান প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ৪৬ রান করে। অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।

রিজেওয়ানের পর উসামা মীরও ফিরে যান সাজঘরে। জশ হ্যাজেলউডের বলে ডিপ ফোইন লেগে মিচেল স্টার্কের হাতে ক্যাচ তুলে ফিরে যান তিনি।

১৬ বলে ১৪ রান করা মোহাম্মদ নওয়াজও ফিরে যান সাজঘরে। অ্যাডাম জাম্পার চতুর্থ শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি।

২৮৭ রানে ৮ উইকেট হারানো পাকিস্তানের ইনিংস আর বেশিদূর যেতে পারেনি। শেষের দিকে হাসান আলী, শাহীন আফ্রিদি ও হারিস রউফ শুধু পাকিস্তানের হারের ব্যবধানটাকেই কমিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ৪৫ ওভার ৩ বলে সব উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রানেই থামে পাকিস্তানের ইনিংস। আর অস্ট্রেলিয়া তুলে নেয় ৬২ রানের জয়।

অজিদের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেন শাহীন আফ্রিদি। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় রিভিউ নেয় পাকিস্তান। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি পাকিস্তানের। উল্টো রিভিউ হারায় বাবর আজমের দল।

এরপর দুই ওপেনার দেখশুনেই খেলতে থাকেন। চতুর্থ ওভারে শাহীন আফ্রিদির বলে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু মিড অনে থাকা উসামা মীর সহজ ক্যাচটি তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। যার ফলে ব্যক্তিগত ১০ রানে জীবন পান ওয়ার্নার।

১০ রানে জীবন পাওয়া ওয়ার্নার ও আরেক ওপেনার মিচেল মার্শ এরপর পাক বোলারদের ওপর চড়াও হতে শুরু করেন। এই দুই ওপেনারের জুটিতে দলীয় ৮ ওভার ২ বলে দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে অস্ট্রেলিয়া। আর প্রথম পাওয়ার প্লেতে তুলে নেয় ৮২ রান। এরপর মাত্র ১২ ওভারেই তুলে নেয় দলীয় শতক।

১০ রানে জীবন পাওয়া ওয়ার্নার এরই মাঝে তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। মাত্র ৩৯ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ৫টি চারের মার ও৩ টি ছয়ের মার। আরেক ওপেনার মিচেল মার্শও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।

হাসান আলী, ইফতিখার আহমেদ, হারিস রউফ, উসামা মীর ও মোহাম্মদ নওয়াজ হাজার চেষ্টা করেও ভাঙতে পারছিলেন না এই জুটি।

১০ রানে জীবন পাওয়া ওয়ার্নার ৮৫ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। যার মধ্যে রয়েছে ৭টি চারের মার ও ৬টি ছয়ের। আরেক ওপেনার মিচেল মার্শ ১০০ করেন ১০০ বলে। চার মারেন ১০ টি আর ছক্কা হাঁকান ৬টি।
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটিকে অবশেষে ভাঙেন শাহীন আফ্রিদি। ১০৮ বলে ১২১ রান মিচেল শাহীন আফ্রিদির বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন। এর আগে ওয়ার্নারে ক্যাচ ফেলে দেওয়া উসামা মীর এবার আর ভুল করেননি। শর্ট ফাইন লেগে মিচেল মার্শের ক্যাচ তালুবন্দি করেন তিনি। তার বিদায়ে অবশেষে ২৫৯ রানে ভাঙে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি।

অজিদের এই ওপেনিং জুটি আজ নাম লিখিয়েছে আরও অনেক রেকর্ডে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে আজ শ্রীলঙ্কা ও ভারতের পর দুই ওপেনারের সেঞ্চুরি করার কীর্তি দেখাল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।

এছাড়া বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটিতেও হয়েছে আরেকটি রেকর্ড। বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়লো অজিরা। নিজেদের রেকর্ড আজ নিজেরাই ভাঙল। পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ অজিদের ওপেনিং জুটি ভাঙে ২৫৯ রানে। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপে কানাডার বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে শেন ওয়াটসন ও ব্রাড হাডিন ১৮৩ রান করেন, যা ছিল এতদিন সেরা।

আরেক ওপেনার মার্শের সেঞ্চুরিতেও হয়েছে রেকর্ড। আজ অস্ট্রেলিয়ান এই ওপেনারের জন্মদিন। বিশ্বকাপে জন্মদিনে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এর আগে নিউজিল্যান্ডের রস টেইলর এই কীর্তি গড়েছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপে এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই ১৩১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন।

মিচেল মার্শের পথ ধরে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও ফিরে যান সাজঘরে। মিচেল মার্শের আউট হওয়ার পরের বলেই তিনিও ফিরে যান। বাবব আজমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের পথ ধরে স্টিভেন স্মিথও। ৯ বলে ৭ রান করে উসামা মীরের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। দলীয় ৩২৫ রানে ফিরে যান সেঞ্চুরি করা ডেভিড ওয়ার্নারও। লং অনে শাদাব খানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন ১২৪ বলে ১৬৩ রান।

ওয়ার্নারের বিদায়ের পর জস ইংলিস, মার্কাস স্টয়নিস, মার্নাস লাবুশানে,প্যাট কামিন্স, অ্যাডাম জাম্পা ও জশ হ্যাজেলউড খুব বেশি রান যোগ করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬৭ রান করতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিয়া।
পাকিস্তানের হয়ে শাহীন আফ্রিদি ৫টি, হারিস রউফ ৩টি আর উসামা মীর ১টি উইকেট নেন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com