ফিলিস্তিনের গাজায় গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৫০০ ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে এই হামলা চালানো হয়। এর আগে ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা ‘নিরাপদ’ ভেবে ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন অনেকে। হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে বিশ্বব্যাপী। কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়- বিশ্বের একাধিক নেতা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
প্যালেস্টাইন
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের একজন মুখপাত্র ইসরায়েলের এই ন্যক্কারজনক বিমান হামলাকে ‘গণহত্যা’ এবং ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে নিন্দা করেছেন।
একই সঙ্গে এই ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের সাথে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক থেকেও সরে এসেছেন মাহমুদ আব্বাসে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)
ইসরায়েলের এই হামলার পর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আল আহলি আরব হাসপাতালে হামলার পর বিবৃতিতে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসুস সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলো থেকে শত শত মৃত্যু এবং আহতের ইঙ্গিত দেয়। আমরা অবিলম্বে স্বাস্থ্যসেবা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাই।
আরব লীগ
আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল গিত বলেছেন, অবিলম্বে এই ট্র্যাজেডি বন্ধ করতে হবে। কোনো পৈশাচিক মন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি হাসপাতাল এবং এর অরক্ষিত বাসিন্দাদের ওপর বোমাবর্ষণ করে?
তিনি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, আরব লীগ এই যুদ্ধাপরাধের বিষয়গুলো নথিভুক্ত করবে এবং অপরাধীরা তাদের কর্ম থেকে রেহাই পাবে না।
তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘নারী, শিশু এবং নিরপরাধ বেসামরিকরা অবস্থান করা একটি হাসপাতালে আঘাত করা ইসরায়েলের সবচেয়ে মৌলিক মানবিক মূল্যবোধের বাইরে গিয়ে এই হামলা সর্বশেষ উদাহরণ।’
গাজার এই নজিরবিহীন বর্বরতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে তিনি বিশ্বের সকলকে আহ্বান জানান।
জর্ডান
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে, জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক সুরক্ষা এবং যুদ্ধের অবসানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের বোমা হামলা একটি ‘গণহত্যা’ এবং ‘যুদ্ধাপরাধ’ এই বষয়ে কেউ নীরব থাকতে পারে না।
মিসর
এই হামলার নিন্দা করে কঠোরভাবে বিবৃতি দিয়েছে মিসরীয় সরকার। বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং এসব বিষয় প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
কাতার
এই হামলা আরও বিপদ বাড়াবে বলে বিবৃতি দিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ‘হাসপাতাল, স্কুল এবং অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলের হামলা আরও বিপদ বাড়াবে।
কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হামলার নিন্দা করেছেন এবং যুদ্ধের আইন মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
ট্রুডো সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গাজা থেকে যে খবর আসছে তা ভয়ংকর এবং একেবারেই অগ্রহণযোগ্য … সব ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার। যুদ্ধের নিয়ম রয়েছে এবং হাসপাতালে আঘাত করা গ্রহণযোগ্য নয়।’
ইরান
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সাধারণ নিরস্ত্র ও অরক্ষিত মানুষদের ওপর হামলার পর নিন্দা জানিয়েছে।