ক্রীড়া ডেস্ক: চলতি বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানদের ছয় উইকেটে হারায়। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে রান রেটে অনেকে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। শুক্রবার চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে তৃতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বাংলাদেশ ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারল নিউজিল্যান্ডের কাছেও।
এদিকে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচেও জয় তুলে নিল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের দেওয়া ২৪৬ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা। এরপর কনওয়ে-উইলিযামসন জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। কনওয়ে ৪০ রানে বিদায় হলেও ড্যারিল মিচেলের রান অপরাজিত ৮৯ রান ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ৭৮ রানে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৪৩ বল বাকি থাকেই জয় তুলে নিলো নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র। দলীয়মাত্র ১২ রানেই মেস্তাফিজের শিকার হয়ে ফিরে যান রাচিন রবীন্দ্র। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই রাচিনকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান ফিজ।
১২ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন ডেভন কনওয়ে ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। হাজার চেষ্টা করেও তাদের জুটি ভাঙতে পারছিলেন না বাংলাদেশর বোলাররা।
অবশেষে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ভাঙেন এই জুটি। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ৫৯ বলে ৪৫ রান করা ডেভন করওয়েকে ফেরান তিনি। যার ফলে ভেঙে যায় কনওয়ে-উইলিয়ামসনের ৮০ রানের জুটি।
কনওয়ে ফিরে গেলেও উইলিয়ামসন চড়াও হতে থাকেন বাংলাদেশর বোলারদের ওপর। তার সঙ্গে যোগ দেন ড্যারেল মিচেল। অসুস্থ হয়ে ১০৭ বলে ৭৩ রান করে ফিরে যান উইলিয়মসন। এরপর ক্রিজে নামেন গ্লেন ফিলিপস।
ফিলিপসকে সঙ্গে নিয়ে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন ড্যারেল মিচেল। তিনি আজ অপরাজিত থাকেন ৮৯ রানে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৪২ ওভার ৫ বলে ২ উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁয়ে যায় ব্ল্যাকক্যাপরা। এই জয়ে টানা তিন ম্যাচ জিতল কিউইরা।
এরআগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানেই এক উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলেই ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হয়ে ফিরে যান আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস। শূন্য রানেই ভাঙে বাংলাদেশর ওপেনিং জুটি।
এরপর তানজিদ হাসানকে নিয়ে জুটি গড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। তানজিদকে নিয়ে দলের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দলীয় ৪০ রানে লকি ফার্গুসনের শিকার হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। আউট হওয়ার আগে করেছেন ১৭ বলে ১৬ রান।
তামিমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এবার শান্তকে নিয়েই লড়ছিলেন মিরাজ। কিন্তু বেশি সময় তিনিও থাকতে পারেননি ক্রিজে। লকি ফার্গুসনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। আউট হওয়ার আগে করেন ৪৬ বলে ৩০ রান।
মিরাজের বিদায়ের পর ফিরে যান শান্তও। ৮ বলে ৭ রান করা শান্তকে ফেরান গ্লেন ফিলিপস।
শান্তর বিদায়ের পর মুশফিক ও সাকিবের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। এই জুটিতে ভর করে দলীয় ১৫০ রানও তুলে বাংলাদেশ। ফলে কিউইদের বিপক্ষে বড় স্কোর সংগ্রহের স্বপ্ন দেখতে থাকেন ভক্তরা। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪০ রানে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। ভেঙে যায় সাকিব-মুশফিকের ৯৬ রানের জুটি। ৫১ বলে ৪০ রান করেন তিনি।
এর আগে চলতি বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিকুর রহীম। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশি। আর আজ নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও তুলে নিলেন হাফ সেঞ্চুরি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অন্য ব্যাটারটা যখন আসা যাওয়ার মিছিলে ছিলেন, তখন সাকিবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মুশি। ৫২ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। যার মধ্যে রয়েছে ৫টি চারের মার দুইটি ছয়ের মার।
সাকিবের পর ফিরে যান মুশফিকও। ম্যাট হেনরির বলে বোল্ড হন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৭৫ বলে ৬৬ রান করেন তিনি। এর তিন ওভার না যেতেই বোল্টের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তাওহীদ হৃদয়। ২৫ বলে ১৩ রান করেছেন তিনি।
মুশফিক ও তাওহীদ হৃদয়ের বিদায়ের পর তাসকিন আহমেদকে নিয়ে জুটি গড়েন একম্যাচ পর একাদশে সুযোগ পাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
কিন্তু মিচেল স্যান্টনানের শিকার হয়ে ১৯ বলে ১৭ করে তাসকিন আহমেদ সাজঘরে ফিরে গেলে ভেঙে যায় জুটি। এই জুটি থেকে আসে ৩৪ রান। এরপর মোস্তাফিজুর রহমানও ফিরে যান ৪ রান করে।
শেষের দিকে একাই লড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার অপরাজিত ৪১ রানে মেস পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪৫ রান তুলতে সক্ষম হয়।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে লকি ফার্গুসন তিনটি, ট্রেন্ট বোল্ট দুইটি, ম্যাট হেনরি দুইটি, মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস একটি করে উইকেট নেন।