আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ফের ভারতের বিহারের বক্সারে ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন নিহত ও অন্তত ৬০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১১ অক্টোবর) রাতে বিহারের বক্সার জেলার রঘুনাথপুর স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছে ১২৫০৬ আনন্দ বিহার-কামাখ্যা নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেসের ছয়টি বগি। এর মধ্যে তিনটি বগি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে পাশের জমিতে।
ট্রেনটি দিল্লির আনন্দ বিহার টার্মিনাল থেকে অসমের কামাখ্যার দিকে যাচ্ছিল। স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিট নাগাদ রঘুনাথপুরের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। ঘটনায় একাধিক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ভারতীয় রেলের তরফে প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনায় চার যাত্রী নিহত ও কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছেন।
ইতোমধ্যে একাধিক হেল্পলাইন নাম্বর চালু করা হয়েছে। দুর্ঘটনার মাত্র কিছুসময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ট্রেন দুর্ঘটনার পরেই ওই সেকশনে আপ এবং ডাউন লাইনে ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেললাইন, ইলেকট্রিক পোল, সিগনাল পোস্ট।
বক্সারের জেলা প্রশাসক অংশুল আগরওয়াল চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছেন ‘আহতদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লাইনচ্যুত বগিগুলির মধ্যে কোন যাত্রী আটকে পড়েছে কিনা তার সন্ধান চলছে।’ দুর্ঘটনার পরই দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং বক্সার ও ভোজপুর জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। দ্রুততার সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ চালানোর পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দানাপুরের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার জয়ন্তকুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার জেরে বৈদ্যুতিক খুঁটি, সিগন্যাল পোস্ট এবং আপ-ডাউন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি-হাওড়া মেন লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কয়েকটি ট্রেন অন্য রুট দিয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। আবার বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়েছে একাধিক ট্রেন। দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। কী কারণে কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকাজ এবং পরিষেবা স্বাভাবিক করার উপর জোর দিচ্ছে রেল।
ইতোমধ্যেই দুর্গতদের সাহায্যে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। ঘটনা স্থলে পৌঁছেছে রেল পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী, অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকরা। যদিও আলোর অভাবে উদ্ধার কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। পাটনা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, নালন্দা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস এবং ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস- পার্টনার এই তিনটি হাসপাতালকে জরুরী ভিত্তিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতে ছিলেন আসামের একাধিক নাগরিক। তাই দুর্ঘটনার উপর নজর রাখছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও। নিজের এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘আনন্দ বিহার থেকে কামাখ্যাগামী ১২৫০৬ নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’