দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে পুকুর থেকে উঠছে গ্যাস। সেই গ্যাস নিয়ে চলছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। পুকুর থেকে গ্যাস উত্তোলন অবিশ্বাস্য হলেও দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা গ্রামে ঘটেছে এই ঘটনা। টেংরাটিলা গ্রামের চারটি মাছ চাষের পুকুর থেকে প্রতিনিয়ত উঠছে গ্যাস। সেই গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মানুষের বাড়ি বাড়ি সংযোগ দিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন ওই সব পুকুর মালিকরা।
২০০৫ সালে কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে দুই দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডে। এতে দেশের গ্যাস-সম্পদ ও দোয়ারাবাজারের উপজেলার কয়েকটি এলাকার মানুষ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরে বর্তমান সরকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ১৬ বছর পরও এখনো গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে টেংরাটিলা নামক ওই গ্রামটিতে। টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ ২০০৫ সালে দুই দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ফেলে পরিবার নিয়ে অনত্র চলে যান। সেই অগিকাণ্ডে ক্ষতি হয় তার ঘরবাড়ি ও আশপাশের প্রকৃতির। পরে অবস্থার উন্নতি হলে দু’বছর পর ২০০৭ সালে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। একদিন তিনি দেখতে পান পুকুরের নিচ থেকে মাটি ফেটে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস উদগিরণ হচ্ছে। পরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিমেন্টের তৈরি পানির গামলা বানিয়ে সেখানে লোহার পাইপ বসান। গ্রামীণ পদ্ধতিতে পুকুর থেকে গ্যাস উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী বসতঘর হারা আব্দুল লতিফ। আব্দুল লতিফ জানান, সবকিছু হারিয়ে আমি যখন নিঃস্ব তখন বাড়ির এই পুকুর থেকে গ্যাস উত্তোলনের পর বিক্রি করে আজ আমি স্বাবলম্বী। ১৬ বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকার গ্যাস বিক্রি করেছি।
পুকুর থেকে গ্যাস তুলে শুধু আব্দুল লতিফেরই ভাগ্য বদলায়নি; গ্রামের আরো তিনটি পুকুরের নিচ থেকে মাটি ফেটে গ্যাস বের হচ্ছে। সেখান থেকে প্লাস্টিকের পাইপ লাগিয়ে সরাসরি গ্রামের শতাধিক পরিবারের মাঝে গ্যাস বিক্রি করছেন তারা। যারা এই গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন তাদেরকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পুকুর মালিকদের দিতে হচ্ছে। গত ১৬ বছর ধরে চলে আসা এই নিয়মে গ্যাস উত্তোলন করে বিক্রি করে প্রায় কোটি টাকা আয় করেছেন পুকুর মালিকরা।
এ দিকে গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়া অনিরাপদ এসব গ্যাস লাইনের সংযোগের কারণে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি এলাকার মানুষজন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। সেই সাথে পুরো গ্রামে প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই। সম্ভবনাময় এই চারটি পুকুর খনন করলে এখান থেকে কোটি কোটি টাকার গ্যাস ও খনিজসম্পদ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রব্বানী চৌধুরী জানান, টেংরাটিলায় অভিযান পরিচালনা করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি কেউ আবার গ্যাস উত্তোলন করে বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।