ঢাকা : ‘খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩’ পাসে তড়িঘড়ি না করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ দাবি জানান।
‘খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন’ নিয়ে পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন টিআইবির ডেটা প্রটেকশন অফিসার ড. তারিকুল ইসলাম।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন। সাইবার সিকিউরিটি আইন পাসে যেভাবে তড়িঘড়ি করা হয়েছে, তেমনি খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন পাসে যেন তড়িঘড়ি না করা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকার এরই মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, অংশীজনের অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে। সেই সুযোগ যেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। চূড়ান্ত খসড়া সংসদে উপস্থাপনের আগে সবার সঙ্গে যেন আলোচনা করা হয়।
তিনি বলেন, সংবিধানে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার যে বিধান আছে, সেটি রেফারেন্স হিসেবে থাকলে আইনটি আরও বেশি মানবাধিকার কেন্দ্রিক হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেনামি এবং ছদ্মনামযুক্ত উপাত্তের পার্থক্য করার পরামর্শ দিয়েছিল টিআইবি। আইনটি পাসের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্তত দুই বছর গ্রেস পিরিয়ডের সুপারিশ আগের খসড়ায় থাকলেও নতুনটিতে নেই। এ ছাড়া আইনের খসড়াতে ‘ডেটা সাবজেক্ট’র একটি পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল টিআইবি, কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি।
সংস্থাটি জানায়, উপাত্ত সুরক্ষা আইন কেবল ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু খসড়া আইনে তার প্রতিফলন নেই। আবার সংজ্ঞা ধারা পুনর্গঠনের জন্য টিআইবির সুপারিশ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
আইনের বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করে সংস্থাটি বলছে, খসড়া আইনে মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল টিআইবি। তবে সুপারিশ আংশিকভাবে গৃহীত হয়েছে। ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২৩’ নামের পরিবর্তে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২৩’ করার পরামর্শ দেয় টিআইবি।
আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী ‘প্রোফাইলিং’ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার বিষয়ে সংস্থার পরামর্শ ছিল। স্বাধীন উপাত্ত সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা সংস্থা সম্পর্কিত টিআইবির পরামর্শ যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সংস্থাটি আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে।
পর্যালোচনায় বলা হয়, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তার, আইনগত কার্যধারার মতো প্রয়োজন ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিগত উপাত্তের প্রসেসিং নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
পর্যালোচনায় আরও বলা হয়, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের সম্মতির বয়স সামঞ্জস্যের জন্য সংস্থাটির সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি। ১৮ এর পরিবর্তে ১৩-১৬ এই বয়স ক্রমের পরামর্শ দিয়েছিল সংস্থাটি। দাবিটি আবারও পুনর্ব্যক্ত করে সংস্থাটি।
উপাত্ত সংশোধন এবং প্রত্যাখ্যানের আগে উপাত্তধারীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে টিআইবির প্রস্তাব স্বীকার করা হয়নি বলে পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়।
টিআইবির পর্যালোচনায় আরও বলা হয়, বিদেশি নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণের অধিকারের বিষয়ে টিআইবির সুপারিশ যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হয়নি। বিদেশি নাগরিকদের এ-সংক্রান্ত বিধান অপূর্ণাঙ্গ, এক্ষেত্রে বিস্তারিত বিধান আইনে থাকা জরুরি।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা দ্বারা গোপনীয়তা এবং ব্যক্তিগত উপাত্তের সুরক্ষা সীমাবদ্ধ না করতে টিআইবির পরামর্শ বিবেচনা করা হয়নি বলেও দাবি করে সংস্থাটি।
পর্যালোচনায় বলা হয়, অতিমাত্রায় বিধি দ্বারা আইন প্রণয়নের প্রবণতা কমানোর টিআইবির সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে উপাত্ত নিয়ন্ত্রকদের উপাত্ত সুরক্ষার দায় বিষয়ে পরামর্শ বিবেচনা করা হয়নি।
উপাত্ত সুরক্ষার মান রক্ষার সকল পদ্ধতি আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার দাবি থাকলেও এবং উপাত্ত সুরক্ষা নীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত অপ্রয়োজনীয় ধারাগুলো অপসারণের টিআইবির সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি।
টিআইবির পর্যালোচনায় আরও জানানো হয়, উপাত্তের রেকর্ড সংরক্ষণে সবধরনের উপাত্ত নিয়ন্ত্রকের দায়যুক্ত বিধান বাতিল করা সংক্রান্ত সংস্থাটির পরামর্শ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। উপাত্ত বিচ্যুতির নোটিশ প্রদান সংক্রান্ত সুপারিশ আংশিকভাবে গৃহীত হয়েছে।
এছাড়া নিরীক্ষকের যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে উপাত্ত সুরক্ষা আইন এবং প্রবিধানে দক্ষতা যুক্ত করার সংক্রান্ত সংস্থাটির প্রস্তাবের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়নি বলে জানায় টিআইবি।
টিআইবির পর্যালোচনায় আরও জানানো হয়, উপাত্ত সুরক্ষা বিষয়ে সরকারি সংস্থার অতি দায়মুক্তির বিধান বাতিলের পরামর্শ নতুন খসড়ায় প্রতিফলিত হয়নি।
টিআইবি জানায়, দেওয়ানী প্রতিকার এবং প্রশাসনিক জরিমানা দিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রয়োগের বিধান বাতিলের সংস্থাটির সুপারিশ গৃহীত হয়েছে। টিআইবি বলছে, নতুন এই আইন সংসদে পাস হওয়ার আগে সময় নিয়ে পর্যালোচনা করে যেন পাঠানো হয়৷