অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় যেকোনো সময় ২ জনের ফাঁসি কার্যকর

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩

ঢাকা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের করা সবশেষ আবেদন খারিজ করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে যেকোনো সময় দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আর বাধা নেই।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তাহেরের হত্যা ১৯৭১ সালের বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাবের করা রিটের শুনানি শেষে ১৭ জুলাই বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে আদেশ দেন। পরে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চাওয়া হয়।

এ বিষয়ে গত ৮ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, রাবি শিক্ষক হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা কারাবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। তবে, সেই আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। তার চিঠি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাঁচ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে। এখন কারাবিধি মেনেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

সে সময় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কামাল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ায় ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা রইল না। এখন জেলকোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরের ধাপগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করা হবে।

এর আগে বুধবার (৩ মে) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির বেঞ্চ ২১ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করেন। পরে নিয়মানুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায় রাজশাহীর আদালতে পাঠানো হয়। এরপর রাজশাহীর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় পদোন্নতিসংক্রান্ত বিষয়ের জেরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুইজনকে খালাস দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম। খালাসপ্রাপ্ত দুইজন হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম।

এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বাড়াতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আসামিদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের এটি বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধুমাত্র প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না। আমাদের এটি বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করতে ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com