বরিশাল: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যাওয়ার ৯ ঘণ্টা পার হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না উদ্ধারকারী বাহিনীগুলো। নৌ-বাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএর ১১টি ইউনিট সর্বশক্তি দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও আগুনের স্ফুরণ কমাতে পারছে না। বরং অস্বাভাবিক রকমের কুণ্ডলী পাকিয়ে জ্বলছে সাগর নন্দিনি-২ জাহাজ। আগুনের লেলিহানে পুরো আকাশ ছেয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সর্বশেষ রাত ৩টায় এমন চিত্র দেখা গেছে। ঘটনাস্থলের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সংস্থাগুলোর কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা হয় । তাদের ধারণা জাহাজে থাকা প্রায় ৫ লাখ লিটার জ্বালানি তেল পোড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশ না করলেও দুইজন কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু জাহাজটির জ্বালানি ট্যাংকারে আগুন লেগে গেছে সেহেতু এ অবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত তেল পুড়ে শেষ না হবে ততক্ষণে এ আগুন নিভবে না।
সেই ধারণা থেকে রাত আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জাহাজটির পাশ থেকে সরে গেছেন। তবে নির্ধারিত এলাকা কর্টন করে রেখেছে উদ্ধারকারী দলগুলো।
ঝালকাঠি সদর ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, সাগর নন্দিনি-২ জাহাজ থেকে তেল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল সাগর নন্দিনি-৪ জাহাজে। বিস্ফোরণে উদ্বেগ ছিল সাগর নন্দিনি-৪ জাহাজেও আগুন ধরে যায় কি না। তবে সাগর নন্দিনি-৪ নিরাপদে বিস্ফোরিত জাহাজটির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।
এ কর্মকর্তা বলেন, সাগর নন্দিনি-২ জাহাজটির ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি রয়েছে তা এখনি বলা মুশকিল। তবে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আগুন নিয়ন্ত্রণের।
জানা গেছে, সাগর নন্দিনি-৪ জাহাজটিতে ৬ লাখ লিটার জ্বালানি তেল রয়েছে।
এর আগে শনিবার (১ জুলাই) সুগন্ধা নদীতে নোঙর করে থাকা সাগর নন্দিনি-২ জাহাজের ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণে ৪ জন নিহত ও ৫ জন দগ্ধ হন। সেই উদ্ধার অভিযান শেষ করে তেল অপসারণের সময়ে সোমবার সন্ধ্যায় আবারও বিস্ফোরিত হয়। এতে ১২ জন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৪ জন দগ্ধ হয়েছেন। দুই দফায় বিস্ফোরণে এ জাহাজে দগ্ধের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৯ এবং নিহত ৪ জনে।
দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে সাব-মারসিবল পাম্প বিস্ফোরণ।
শেষবারের ঘটনায় আহতরা হলেন, কনস্টেবল শওকত, দ্বীপ, পলাশ মোল্লা, মেহেদী, নকীব, সাইফুল, লিপন গাইন, এএসআই গণেশ, এসআই আব্দুলদ হাকিম, নায়েক সিদ্দিক, এসআই মোস্তফা কামাল, এটিএসআই হেলাল উদ্দিন। জাহাজের কর্মচারী শরীফ এবং কাইয়ুম। এরমধ্যে দুজনকে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং ১১ জন ঝালকাঠি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আর প্রথম দফায় (১ জুলাই) বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন, জাহাজের গ্রিজারম্যান আব্দুস সালাম হৃদয়, মাস্টার ইনচার্জ রুহুল আমীন খান, সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান বেলাল এবং ড্রাইভার সারোয়ার হোসেন। ওইদিনের ঘটনায় আরও ৫ জন আহত হন।
উল্লেখ্য, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তেল নিয়ে চাঁদপুরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার পথে ভোলার তুলাতুলি কাঠিরমাথা এলাকায় ডুবে গিয়েছিল। ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সুগন্ধা নদীর একই স্থানে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ জাহাজটিতেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন।