এক্সপ্রেসওয়েতে ফের দুর্ঘটনা, পুলিশসহ নিহত ৩

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

মুন্সীগঞ্জ: ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে আটজন মারা যাওয়ার একদিন পর দুটি দুর্ঘটনা ঘটল একই মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের মাওয়া অংশে। একটিতে মাইক্রোবাসের চাপায় পুলিশ কনস্টেবল ও এক নারী মারা গেছেন। আরেকটিতে পিকাপ ও কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন।

রোববার (২৫ জুন) ভোর ৫টার দিকে প্রথমটি এবং সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পদ্মা সেতু উত্তর থানার গোল চত্বর এলাকায় টোল প্লাজা কাছে মাইক্রোবাস চাপায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল এবং এক নারী মারা যান। আহত হন আরও তিনজন। নিহত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলের নাম মোতালেব বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে নিহত নারীর নাম এখনো জানা যায়নি।

এই ঘটনায় গুরুতর আহত অপর তিনজনকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়েতে গত এক বছরে দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় পাঁচজনের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এই মহাসড়কে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টঙ্গী কলেজ গেট এলাকা থেকে শরীয়তপুরের দিকে যাচ্ছিল একটি মাইক্রোবাস। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা মোড় এলাকায় পৌঁছালে দ্রুতগতির গাড়িটি হঠাৎ বেপরোয়াভাবে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী নারী এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ওই নারীর। গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। সেখানে মৃত্যু হয় পুলিশ সদস্য মোতালেবের। আহত অপর তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ঘাতক মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় চালক নূরনবী পালিয়ে গেছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে রোববার ভোর ৫টার দিকে এক্সপ্রেসওয়ের শেখ রাসেল সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। পিকাপ ও কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে একজন নিহত এবং দুইজন গুরুতর আহত হন।

শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডিউটি ডাক্তার কমলেশ বাচ্চি জানান, মাওয়াগামী পিকাপের (যশোর ন ১১-১৪১০) সাথে কাভার্ডভ্যানের (ডিএম ট ১৫-৫৭৯০) সংঘর্ষ হয়। এতে অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে এলে একজন মারা যান। অপর দুইজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

মাওয়া হাইওয়ে সাব ইনেসপেক্টর মো. আছিব জানান, কাভার্ডভ্যানটি ওয়েট মাপার জন্য অপেক্ষা করছিল। একটি পিকাপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এসময় ঘটনাস্থলেই পিকাপের একজন মারা যান। অপর দুইজন গুরুতর আহত হন। তবে এখনো কারও নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তবে তারা যশোরের বাসিন্দা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে শনিবার (২৫ জুন) সকালে ফরিদপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে চালকসহ আটজন মারা যান। এর মধ্যে সাতজন একই পরিবারের। তাদের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামে।

এদিকে দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়েতে গত এক বছরে দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় পাঁচজনের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এই মহাসড়কে।

গত এক বছরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব দুর্ঘটনার পেছনে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়া, সামনে বা পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, পথচারীদের গাড়ি চাপা পড়ার মতো ঘটনা রয়েছে।

এই মহাসড়কে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে গত ১৯ মার্চ। ঢাকাগামী একটি বাস খাদে পড়ে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়। সেই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রশাসনের যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেখান দুর্ঘটনার জন্য তিনটি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাসটির বেপরোয়া গতি, বাসটির ফিটনেস না থাকা এবং বৃষ্টির কারণে মহাসড়ক পিচ্ছিল থাকা।

অন্যদিকে বুয়েট যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তারা বলেছে, চাকা ফেটে গেলে এক্সপ্রেসওয়ের পাশে টানা গার্ড বেইল বা নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় বাসটি মহাসড়ক থেকে নিচে পড়ে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। নিম্নমানের টায়ার ব্যবহারকেও সেখানে দায়ী করা হয়।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com