ঢাকা: ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের বাকি দুই সপ্তাহেরও কম। ইতোমধ্যে কোরবানির পশু বেচাকেনার তোড়জোর শুরু হয়ে গেছে। যারা কোরবানি দেবেন তারা শুরু করেছেন হিসাব-নিকাশ। তবে দফায় দফায় গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এবার কোরবানির পশুর দাম চড়া হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাজেটের সঙ্গে বাজারদরের বড় ফারাক থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। এতে গরু লালন-পালনের খরচ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। যার প্রভাব পড়বে কোরবানির হাটে। তাই এবার কোরবারি ঈদে গরুর দাম গতবারের চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। তাদের অনেকেই এবার কোরবানি দিতে হিমশিম খাবেন- এমন ধারণা খামারিদের।
রাজধানীর আফতাবনগর, আনন্দনগর, বাগাপুর এলাকায় কয়েকটি গরুর খাবার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর আফতাবনগর বাগাপুরের গরু খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার কোরবানি ঈদে গরুর দাম অনেক বেশি হবে। কারণ গো খাবারের দাম এখন কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এছাড়া ছোট গরুগুলোও ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় পাওয়া যায় না।
একই এলাকার গরু খামারের ম্যানেজার কামাল হাসান জানান, কোরবানির জন্য ইতোমধ্যে তারা দুটি মহিষ ও তিনটি গরু লালন পালন করছেন। ছয় মাস আগে চারটি গরু কেনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকায়। অপর দুটির মধ্যে একটি এক লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং এক লাখ ২০ হাজার টাকা দামে কেনা হয়েছে। গরুগুলোর প্রতিদিন চার হাজার টাকার খাবার লাগে।
তিনি আরও জানান, চার মাস আগে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে এক জোড়া মহিষ কেনা হয়েছে। এগুলো কোরবানি ঈদে বিক্রি করা হবে। গবাদি পশুগুলোর পরিচর্যার জন্য তিনজন লোক রাখা হয়েছে। প্রতি মাসে তাদের বেতনও প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হয়।
চার বছর থেকে তারা কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করেন জানিয়ে কামাল হাসান বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার গরুর অনেক বেশি দাম থাকবে। কারণ গ্রামের গরুগুলোও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও গোখাদ্যের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে।
একই এলাকার গরুর খামারি ইলিয়াছ মিয়া জানান, প্রতিদিন গমের ভুষি আগে ১২৫০ টাকায় কেনা যেত। এখন সেই ভুষি কিনতে হয় ২৪০০ টাকা দিয়ে। যে বুট আগে কেনা যেত ১৫০০ টাকায় সেই বুট এখন কিনতে হয় ১৮০০ টাকায়।
পলি আক্তার নামের আরেক গরুর খামারি বলেন, আমাদের দুধের জন্য গরুর খামার করেছি। তবে প্রতি বছরের মতো এবারও একটি কোরবানির গরু আছে। এখন থেকে সেটার প্রতি যত্নবান হচ্ছি। সব ঠিকটাক থাকলে বেশি দামে গরুটি বিক্রি করতে পারব। মোট ১০টি গরু রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সপ্তাহে ছয় হাজার টাকার খাবার লাগে।
ইমরুজ মিয়া নামের আরেক গরু ব্যবসায়ী বলেন, গরুর খাবারের দাম আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাচ্ছে।
আব্দুল লতিফ মিয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, তার খামারে ২৮টি গরু রয়েছে। প্রতি মাসে দুই গাড়ি গম ও ভূষি লাগে। এগুলোর দাম ৬৪ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে দুধ বিক্রি করি মাত্র ৬০ হাজার টাকা।
এই ব্যবসায়ী বলেন, যে দুধ বিক্রি করা হয় সেই টাকা দিয়ে গরুর খাবারও কেনা সম্ভব হয় না। এছাড়া গরুর সাথে দুইজন লোক দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাদের বেতন তো পুরোটা লস হচ্ছে।
ফিরোজ মিয়া জানান, তারও সাতটি গরু আছে। এর মধ্যে একটি কোরবারি ঈদে বিক্রি করার জন্য। বাকিগুলো দুধ দেয়।