ঢাকা : এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই দাবিকে ‘অত্যন্ত পরিষ্কার, স্পষ্ট, দৃঢ় উচ্চারণ’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’
রবিবার জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাগপা।
শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। তিনি সবসময় দেশ ও জাতির জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি কোনো সাধারণ নেতা ছিলেন না। তিনি সত্যিকার অর্থেই ত্যাগী, দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী নেতা ছিলেন। তার পিতা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান এসেম্বলির স্পিকার। তিনি নিজেও সারাজীবন পরাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি নীতির প্রশ্নে কোনো আপস করেননি।’
‘তিনি যখন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ক্ষমতা বা অর্থ লোভে গা ভাসিয়ে দেননি। তার রাজনীতির কোনো স্বার্থ ছিল না। তার কাছে দেশ ও দেশের মানুষ ছিলো মূখ্য। আমরা তাকে রাজনীতিতে সম্মান করি। বেগম খালেদা জিয়া তাকে অনেক পছন্দ করতেন। আমরা উনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে চেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা তাকে বেশি দিন পাইনি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদিকে দেশের মানুষ আর অন্য দিকে ক্ষমতায় জোর করে একটি শাসক শ্রেণি আজ মুখোমুখি। এই সরকার যখন আন্দোলন দেখে, তখন তা অন্য দিকে প্রবাহিত করতে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। যে আওয়ামী লীগ বলেছিল, দেশ হবে সাম্যের, গণতন্ত্রের অথচ সেই আওয়ামী লীগ জোর করে অন্যায় ভাবে, একবার নয়, দু দুবার ভোট না করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। যেখানে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না।’
‘২০১৪ সালের নির্বাচন কেউ ভোট দেয়নি। যেখানে কেন্দ্রে কুকুর শুয়ে ছিল। সেজন্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান ২০১৪ সালের নির্বাচনকে বলেছিলেন, এটা একটা কুত্তা মার্কা নির্বাচন। আর ১৮ সালের নির্বাচন তো রাতে হয়েছে।’
দেশের সকল ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সব জায়গায় একই অবস্থা। নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সরকার নির্বাচন দেখাবে, নির্বাচন কমিশন কথা বলবে একটা নির্বাচন হয়েছে কিন্তু নির্বাচনটা তারা তাদের মতো করে করবে।’
‘অত্যন্ত পরিষ্কার, স্পষ্ট, দৃঢ় উচ্চারণ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এ সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে এত মিডিয়া কেউ কি কিছু লিখতে পারে? না। সাংবাদিকরা সব সময় ভয়ে থাকে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি এখনও। অনেক সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে জীবনের ভয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের কোনো সাংবাদিক নেতারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলেন না। কারণ চাকরি চলে যাবে। আরো নানা ভয়ে। এটা হবেই।
‘সবাই মিলে যদি রুখে না দাঁড়ায়, প্রতিবাদ না করে তাহলে দেশ কিন্তু রক্ষা হবে না। মনে রাখতে হবে, এ আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ যারা বাকশাল কায়েম করে মাত্র চারটি পত্রিকা রেখেছিল। আর সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গায়েবী মামলার কথা বলতে বলতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি। খুলনায় হামলা করে, শেষ পর্যন্ত আমাদের ১৩০০ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাহলে বোঝেন, এক মামলায় ১৩০০ আসামী হলে তাহলে কত আসামী করা হয়েছে? আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।’
ভালো মানুষ কখনো আওয়ামী লীগের থাকতে পারেন না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি। আ স ম আব্দুর রব, ওবায়দুর রহমান, মাহমুদুর রহমান মান্না, আব্দুস সালাম আরো অনেক আওয়ামী লীগ করতেন।’
‘কেউ আর আওয়ামী লীগ থাকেননি। কারণ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতির আখড়া তৈরি করেছিল। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ‘নিখিল বাংলা লুটপাট সমিতি’। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে। তারা দেশের স্বাধীনতার চেতনা তারা ধ্বংস করেছে।’
‘আমাদেরকে সাম্য সৃষ্টি, গণতন্ত্র পুনরদ্ধারের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ নায়ক তারেক রহমান ফিরে আনতে ও বেগম খালেদা জিয়া কে মুক্ত করতে আমাদের অটল থাকতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া তাদের সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তারা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী দল। এখন অনেক খেলা হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে।’
‘আমাদের শেষ পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ দাবি আদায় করে দিবে না। আমাদের তরুণদের জেগে উঠে বিপ্লব করতে হবে। জাতিকে রক্ষা করা ও বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব তাদের।’
জাগপা সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, এনপিপির অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদত হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার আবিদুর রহমান, আ স ম মেজবাহউদ্দিন, অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির, যুগ্ম সম্পাদক ডা. আওলাদ হোসেন শিল্পী, সাইফুল আলম, যুব জাগপার সভাপতি আমির হোসেন আমু প্রমুখ।