এল নিনো : বিক্ষত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন হুমকি

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩

মহামারীর অভিঘাতে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি। ক্ষত কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের জেরে তৈরি হয় মূল্যস্ফীতি। পশ্চিমা দেশগুলোয় ব্যাংক খাতে বিপর্যয় চলমান অস্থিতিশীল অবস্থাকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যখন সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির মোকাবেলা করতে ব্যস্ত, ঠিক সে মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা শোনালেন নতুন অশনিসংকেত। চার বছর বিরতির পর তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানতে যাচ্ছে এল নিনো। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি হুমকি তৈরি করছে অর্থনৈতিক কাঠামোয়। খবর সিএনএন।

এল নিনো একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। সময়টিতে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে উষ্ণ থাকে। ফলে উক্ত অঞ্চলে টাইফুন ও সাইক্লোনের আশঙ্কা দেখা দেয়। আবহাওয়া জটিল দিকে অগ্রসর হলে হারিকেন হতে পারে আটলান্টিকে। ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) বিষয়টি নিয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। সাধারণত ২-৭ বছর ব্যবধানে এল নিনো ঘটে। আবহাওয়ার ওপর প্রভাব থাকে ৯-১২ মাস পর্যন্ত। কেবল জলবায়ুতেই পরিবর্তনের ছাপ রেখে যায় না। প্রভাব ফেলে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের দাম থেকে সবকিছুতে। গবেষক ক্রিস্টোফার কালাহান দাবি করেছেন, আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে এল নিনোর নেতিবাচক ফলাফল হয় সুদূরপ্রসারী। ১৯৯৭-৯৮ সালের এল নিনোতে ৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় বৈশ্বিক অর্থনীতি। ১৯৮২-৮৩ সালের এল নিনোর সময় ক্ষতির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার। দৃশ্যত এল নিনো শেষ হয়ে গেলেও বিভিন্ন দেশ তার প্রভাব বুঝতে পারে অনেক পরে। যতটা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বাস্তবিকভাবে তাদের সঙ্গে জড়িত হুমকির মাত্রা আরো বেশি।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার আবহাওয়া বিজ্ঞানের অধ্যাপক জিন-ই ইয়ু দাবি করেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরে সীমাবদ্ধ নয় এল নিনোর প্রভাব। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় খরার সৃষ্টি করে। বিপরীতে দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকায় তৈরি করে বৃষ্টি। অথচ প্রথম অঞ্চলটি বৃষ্টিপ্রবণ ও দ্বিতীয়ত খরাপ্রবণ। অস্বাভাবিক বন্যা, খরা, হারিকেন, দাবানল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে। ফল দৃশ্যমান হয় যাপিত জীবনে। আগামী দিনগুলোয় আমেরিকায় বেড়ে যেতে পারে চিনি ও কোকোর দাম। মন্দা দেখা দিতে পারে কফি শিল্পের ক্ষেত্রেও। উৎপাদন কমে যাওয়ায় ঘাটতি দেখা দেয় সরবরাহে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এল নিনো মৌসুমের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

বিএমও ক্যাপিটালের বিশ্লেষক সাইমন সিগেল জানিয়েছেন, এল নিনোর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খুচরা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে। যদিও কোনো ব্যবসায়ীই ব্যবসার নেতিবাচকতার জন্য আবহাওয়াকে দোষ দিতে চায় না। খুচরা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন ধরনের ব্র্যান্ডে পড়বে প্রভাব। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে গ্রিল, আসবাবপত্র কিংবা বস্ত্রের বাজারে। পর্যটন শিল্পেও এল নিনোর ধাক্কা উপলব্ধ হবে বলে মনে করেন সিগেল। ২০২১ সালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখা যায়, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই ৪৮টি প্রাকৃতিক ভ্রমণ গন্তব্যে পর্যটকরা যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এল নিনোর কারণে। ডয়েচে ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ১৬টি করে হারিকেনের সাক্ষী হয়েছে প্যাসিফিক অঞ্চল। আর এ আবহাওয়াজনিত উদ্বেগ অস্থিতিশীল করবে পর্যটন খাতকে।

বৈশ্বিক উড়োজাহাজ পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোও আশঙ্কাজনক ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাবে। এর মধ্যে ফ্লাইট বাতিল ও দেরি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আসছে দিনগুলোয় সংখ্যাটি বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ সালের এল নিনো অতটা শক্তিশালী ছিল না। গবেষক ক্রিস্টোফার কালাহান পূর্বাভাস দিয়েছেন ২১ শতকে এল নিনোর কারণে ৮৪ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে পৃথিবী। আর প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করবে চলতি বছরের শেষ দিকেই।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com