ঢাকা: ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে এই সরকার ও ঢাকার দুই সিটির মেয়র ব্যর্থ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চরম ব্যর্থ সরকার। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বিকার।’
রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যখাতে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু মৃত্যুদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
‘সংবাদমাধ্যমে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু সংবাদই হচ্ছে এখন প্রধান শিরোনাম’ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ২০ জন করে লোক মারা যাচ্ছে। শুধু সরকারি হিসাবেই গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৭৪৮ জন। এ বছর মোট মৃত্যু ৭১৬ জন যার মধ্যে ৫১৩ জন ঢাকাতে এবং ২০৩ জন ঢাকার বাইরে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩৫ জন, যার মধ্যে ৬৬ হাজার ৬৫ জন ঢাকায় এবং ৭৯ হাজার ২৭০ জন ঢাকার বাইরের।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিম্নমানের কিট ও সরকারের উদাসীনতার জন্য আমরা জানি না কি পরিমাণ রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। আসল রোগীর সংখ্যা কত তা সহজেই অনুমেয় যে কয়েকগুন বেশি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুকে আমরা চিনছি, জানছি। ২০১৮ সালে এসে তা বিভীষিকাময় রূপ দেখায়। ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১৭৯ জন, ২০২০ সালে ৭ জন। ২০২০ সালে করোনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছিল তার হিসাব রাখাই ছিল দায়। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান ১০৫ জন, ২০২২ সালে ২৮১ জন আর ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত ৭১৬, আর কত?’
‘হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না, মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘লাশের সারি প্রতিদিনই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিশুরা মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে, মৃতের একটা বড় অংশ শিশু। সম্প্রতি ৭ দিনের ব্যবধানে ২ সন্তান হারিয়ে ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার খবর কি ব্যর্থ এই সরকারের বিবেককে নাড়া দেয় না? তাদের এসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, জবাবদিহিতা নেই। শুধুমাত্র সরকারের দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে এই রোগ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি, মশা মারার ওষুধ, স্প্রে, স্যালাইন, রোগ নির্ণয়ের কিটের অপ্রতুলতা ও নিম্নমানের জন্য ডেঙ্গু রোগ প্রকট রূপ নিয়েছে। ঢাকার বাইরে রোগ নির্ণয়ের কিট পাওয়া যাচ্ছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধের নামে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন হাজারো কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। ২০১৯ সালেই টিআইবি ডেঙ্গু নিয়ে দুর্নীতির কথা বলেছিল। তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১৫টি সুপারিশ করেছিল, কিন্তু সম্প্রতি টিআইবি জানাচ্ছে, তাদের সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি। তাই এই ভয়াবহ অবস্থা।’
বিএনপি মহাসচিব ডেঙ্গু নিয়ে দুজন সরকারি মুখপাত্রের মতামত প্রণিধানযোগ্য বলে মন্তব্য করেন। এসময় তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মো. গোলাম ছারোয়ারের বক্তব্য উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছিলেন, ‘এ বছর ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ কোন ধরনের মশায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তা আমরা জানি না।’
অপরদিকে মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, ‘মশার প্রাণরাসায়নিক চরিত্র এবং মশার আচরণগত পরিবর্তন কী হয়েছে, তা নিয়ে নিয়মিত গবেষণা হওয়া দরকার’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু ঢাকা সিটিতেই মশা নিধনে বাৎসরিক বাজেট প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা যা ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই আত্মসাত করছে। ডেঙ্গু শুরু হওয়ার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়র পরিবারের প্রমোদ ভ্রমণেই প্রমাণিত হয় এই রোগ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা ও উদাসীনতা। মানবতাহীন অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকার বলেই তারা জনস্বাস্থ্যের প্রতি ভ্রূক্ষেপহীন।’
এসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই মেয়রের পদত্যাগ দাবি কর্নে
মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘দেশের সব দেশপ্রেমিক মানুষ এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সব নেতাকর্মীকে দেশের এই দুর্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে আমাদের প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়াল এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাব যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, ওলামা দলের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, হাফেজ মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।