দুই সিটিতে প্রচার শেষ, ভোটের প্রস্তুতি

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

ঢাকা: আর মাত্র ১ দিন পরেই খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে প্রচার ও গণসংযোগের কাজ। এখন অপেক্ষা কেবল ভোটগ্রহণের। তফসিল অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে দুই সিটিতে। যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের এই দুটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। একই সঙ্গে পুরো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হবে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায়। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে দুই সিটিতেই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণার কাজ শেষ হয়েছে শনিবার রাতে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

প্রচারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ ভোট কিনতে কালো টাকা ছড়ানোর পাশাপাশি ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে সব প্রার্থীই ভোটারদের দলবেঁধে কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র
খুলনা সিটি করপোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডের আওতায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি। এর মধ্যে ১৬১টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ১২৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে খুলনা মহানগর পুলিশ। অর্থাৎ, মোট কেন্দ্রের ৫৬ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

মহানগর পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা জানিয়েছেন, বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রেগুলোয় সাধারণের চেয়ে বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

তার দেওয়া তথ্যমতে— ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় দায়িত্ব পালন করবেন সাতজন করে পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য। সাধারণ প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য এ সংখ্যা যথাক্রমে সাত ও ১০।

অন্যদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৮৪ শতাংশ কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে।

বরিশাল পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৬টি। যার মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের দিন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ থেকে ২৬ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ২২ থেকে ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

নগরীর মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানুষ ভয়ভীতি নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবে না বরং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবে।

সিসিটিভি
রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মোট ২ হাজার ৩১০টি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবারের নির্বাচনের সব কর্মকাণ্ড।

একইভাবে বরিশালেও প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের প্রবেশ পথে দুটি করে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সে হিসাবে এই নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকছে ১ হাজার ১৪৬টি ক্যামেরা।

স্ট্রাইকিং ফোর্স ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দুই সিটিতেই মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে খুলনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে রয়েছে ১১ প্লাটুন বিজিবি। দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে শুরু করেছেন এই বাহিনীর সদস্যরা।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, প্রতি প্লাটুনে ২০ জন করে সদস্য রয়েছেন। বিজিবির টহল দলের সঙ্গে থাকবেন ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আগামী চার দিন তারা মাঠে থাকবেন।

এছাড়া নির্বাচনে আরও ৪ হাজার ৮২০ জন পুলিশ ও ৩ হাজার ৪৬৭ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে থাকবেন ৪৪ জন নির্বাহী হাকিম ও ১০ জন বিচারিক হাকিম।

শনিবার (১০ জুন) বিকেল থেকেই বরিশালে ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুম্পা সিকদার। তিনি জানান, বিজিবির প্লাটুনগুলো শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম ও টিটিসিতে অবস্থান করছে। ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে বিজিবির ১৩টি দল স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে নগরীতে টহল দিচ্ছে।

বিজিবি ছাড়াও নগরীতে ৪ হাজার ৪০০ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিযুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২ হাজার ৩০০। এই নগরেও দায়িত্ব পালন করবেন ৩০ জন নির্বাহী ও ১০ জন বিচারিক হাকিম।

নিষেধাজ্ঞা
দুই সিটিতেই ভোটের আগের ও পরের দিন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্দেশনা অনুযায়ী, শনিবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।

এছাড়া রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ গাড়ি, পিক আপ, প্রাইভেট কার ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

তবে অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যটকের ক্ষেত্রে ওই আইন শিথিল করা হয়েছে। জরুরি সেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না বলে নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com