কক্সবাজার : কক্সবাজারে ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। তবে ঘটনাটিকে পূর্বপরিকল্পিত বলা হলেও কেন এই হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে হত্যা মামলা হয়েছে।
কক্সবাজার মডেল থানায় মামলাটি করেন মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার নিহত সামশুল আলমের স্ত্রী রোকিয়া আকতার। সামশুল ট্রলারটির মালিক। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা চারজন হলেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামাল, কামালের ভাই আনোয়ার হোসেন, বাবুল মাঝি ওরফে শুক্কুর কোম্পানি এবং মোহরাকাটার করিম সিকদার। তারা চারজনই ট্রলার মালিক ও মাঝি।
এদিকে মামলার পর মঙ্গলবার বিকেলেই কামাল হোসেন ও করিম সিকদারকে মহেশখালী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সামশুলের সঙ্গে কামাল ও তার ভাই আনোয়ারের বিরোধ চলছিল।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামের কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ১০ জনের হত্যার ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং লোমহর্ষক। চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে হত্যাকাণ্ডটি পুলিশের সদর দফতর থেকে মনিটর করা হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে পুলিশের পৃথক চারটি দল মাঠে তৎপর রয়েছে। কিন্তু এখনও প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়নি। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
মামলার সবশেষ আপডেট জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, মামলা দায়েরের পর প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেফতার দুই ট্রলার মালিক। বুধবার (২৬ এপ্রিল) গ্রেফতারদের কক্সবাজার আদালতে হস্তান্তর করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানাবে পুলিশ। এরপর ঘটনার প্রকৃত রহস্য বের করা সম্ভব হবে।
ঘটনার বিবরণে পুলিশ জানায়, ট্রলার ১০ লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ও পূর্বশত্রুতার জেরে সংঘটিত হয়েছে। ট্রলারটির মাছ ও জাল লুটের উদ্দেশে ওই জেলেদের প্রথমে মারধর করা হয়। পরে সবাইকে গলায় রশি পেঁচানো হয়। রশি ও জাল দিয়ে হাত-পা বেঁধে আবার মারধর করা হয়। এরপর ট্রলারে মাছ রাখার হিমাগারের ভেতরে আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে পেরেক (তারকাঁটা) ট্রলারের পাটাতন ফুটো করে দেওয়া হয়। এতে ট্রলারটিতে পানি ঢুকে তা ডুবে যায় এবং জেলেদের মৃত্যু হয়।
পুলিশ আরও জানায়, গভীর সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া ট্রলারটি আরেকটি মাছ ধরার ট্রলারের জালে আটকা পড়ে। ওই ট্রলারের জেলেরা রশি দিয়ে টেনে ট্রলারটিকে মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে নিয়ে আসেন। এরপর রোববার বেলা দেড়টার দিকে ট্রলারটি কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক (বিমানবন্দরের পশ্চিমে) চ্যানেলে পৌঁছালে মৃত ব্যক্তির হাত-পা ভেসে উঠতে দেখা যায়। এরপর একে একে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে কক্সবাজার মডেল থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৭ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে নিজস্ব ট্রলারে ১০-১২ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান সামশুল আলম। ৮ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে সামশুল তাকে (বাদী) মোবাইলে জানান জালে অনেক মাছ ধরা পড়েছে। একই সঙ্গে দোয়াও চেয়েছেন তিনি। এরপর থেকে নানাভাবে চেষ্টা করেও স্বামী সামশুলের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি মামলার বাদী।
নিহত ১০ জনের মধ্যে ছয়জনের বাড়ি মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামে। ময়নাতদন্ত শেষে গত সোমবার রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে মহেশখালীতে আনা হয় চারজনের লাশ। তার মধ্যে শাপলাপুরের মিঠাছড়ি গ্রামের তিনজন হলেন, সওকত উল্লাহ (১৮), ওসমান গনি (১৭) ও নুরুল কবির (২৮)। অপরজন হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার সামশুল আলম (২৩)। এ ঘটনায় মিঠাছড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলাম (১৮), সাইফুল্লাহ (২৩) এবং পারভেজ মোশাররফ (১৪) নিহত হলেও তাদের লাশ এখনও হস্তান্তর করা হয়নি।