চীনে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মুখে গত ৭ ডিসেম্বর করোনার কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে এশিয়ার দেশ চীন। এরপর দেশটিতে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

এরিক ফেইগি-ডিং নামে একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যবিদ জানিয়েছেন, আগামী ৩ মাসে চীনের ৬০ শতাংশ মানুষ প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

চীনের ৬০ শতাংশ মানুষ ছাড়াও এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার আশঙ্কা, এ সময়ে মারা যেতে পারেন লাখ লাখ মানুষ।

মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজধানী বেইজিংয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেক মানুষ মারা গেছেন। এর প্রভাবে মৃতদেহ সৎকারের শ্মশানে চাপ বেড়েছে।

এতে করে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, হঠাৎ করে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার মূল্য চীনকে দিতে হবে অনেক মানুষের জীবনের বিনিময়ে।

মহামারি বিশেষজ্ঞ এরিক ফেইগি-ডিং দাবি করেছেন, এখন চীনের ক্ষমতাসীন সমাজতান্ত্রিক দলের লক্ষ্য হলো— ‘যেসব মানুষ আক্রান্ত হবে তারা আক্রান্ত হোক, যারা মারা যাবে তারা মারা যাক।’ তাদের নীতি হলো, এখনই আক্রান্ত, মৃত্যু ও সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছুক। এতে আবারও দ্রুত অর্থনৈতিক উৎপাদন শুরু হবে।

সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর রাজধানী বেইজিংয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মারা যাওয়ার তথ্য জানিয়েছিল চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলেও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি দেশটির মন্ত্রীপরিষদ অফিস ও স্টেট কাউন্সিল।

সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল রাজধানী বেইজিংয়ের পূর্ব দিকের দোংজিয়াও শ্মশানের কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে, এখানে হঠাৎ করেই মৃতদেহ আসা ও সৎকারের অনুরোধের সংখ্যা বেড়েছে।

শ্মশানের একজন নারী কর্মী মার্কিন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘বিধিনিষেধ শিথিলের পর আমরা অতিরিক্ত কাজ করছি। বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে। আমরা কুলিয়ে উঠতে পারছি না। ভোর, মধ্যরাত সবসময় সৎকার চলছে।’

তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত আগে দিনে এখানে ৩০-৪০টি মৃতদেহ আসত। কিন্তু এখন দিনে ২০০টিরও বেশি মৃতদেহ আসছে। যার ধকল পড়েছে শ্মশানটির কর্মীদের ওপর। এরমধ্যে অনেকে আবার উচ্চ সংক্রমণযোগ্য এ ভাইরাসে আক্রান্তও হয়েছেন।

ওই শ্মশানের কম্পাউন্ডে রয়েছে কয়েকটি দোকান। সেখানে সৎকারের পোশাক, ফুল, ক্যাসকেট, কলসিসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা হয়। সেসব দোকানিরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক মৃতদেহ আসছে। তবে ঠিক কতগুলো মৃতদেহ আসছে সেটি বলেননি তারা।

মহামারি বিশেষজ্ঞ এরিক ফেইগি-ডিং জানিয়েছে, মর্গগুলো মৃতদেহে ঠাসা। সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা সৎকার কাজ চলছে। সৎকারের জন্য অপেক্ষমান আছে ২ হাজার মরদেহ। তার মতে, ২০২০ সালে ইউরোপে যে চিত্র দেখা গিয়েছিল এখন চীনে সেই চিত্রটিই দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া চীনের মানুষ এখন ইবোপ্রোফেন নামের একটি ওষুধ হন্যে হয়ে খুঁজছেন। মানুষ অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধটি কেনায় এখন এটি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

চীনে বিধিনিষেধ শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন কত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন তার সঠিক সংখ্যাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি মহামারি শুরুর পর গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি।

এদিকে এ মাসের শুরুতে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানায়, শুধুমাত্র খুব অসুস্থ রোগীর জন্য যেন জরুরিভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন তারা। আগে দিনে প্রায় ৫ হাজার বার অ্যাম্বুলেন্সের ডাক পড়লেও এখন তা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এছাড়া জানা গেছে, চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তাদের যেন দ্রুত বিশেষ চুল্লিতে সৎকার করা হয়। করোনায় মৃতদের কোনো ধরনের সৎকার অনুষ্ঠান বা বিশেষ পোশাক না পরানোর জন্যও বলেছে তারা।

ভ্যাকসিন নেওয়ার হার খুবই কম হওয়ায় এখন ঝুঁকিতে রয়েছেন চীনের ১৪০ কোটি মানুষ।

সূত্র: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com