ঢাকা: দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে বিমা চালু করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস প্রফেসর এবিএম আব্দুল্লাহ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত ‘হৃদরোগ প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শনিবার এবিএম আব্দুল্লাহ এ মন্তব্য করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
প্রফেসর আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা না দিতে পারায় অনেক সময় রাস্তায় মারা যান। তাই হৃদরোগের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো শহর বা বিভাগ কেন্দ্রিক না হয়ে জেলা শহরে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়া উচিত। এতে লোকজন দ্রুত চিকিৎসা পাবে এবং মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের প্রফেসর ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. এস এম মোস্তফা জামান।
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, উপ-কমিটির স্বাস্থ্য ও সদস্য কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক বখতিয়ার রাণাসহ অন্যরা।
প্রেস ক্লাব সদস্যদের চিকিৎসায় সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হার্ট ক্যাম্প হয়। ক্যাম্পে তিন শতাধিক সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
হার্ট ক্যাম্পে ব্লাড প্রেসার পরিমাপ, রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ, লিপিড প্রোফাইল, ইসিজি পরীক্ষাসহ চিকিৎসা বিষয়ক নানা পরামর্শ দেয়া হয়। হার্ট ক্যাম্পের সহযোগিতায় ছিল ল্যাব এইড।
প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ হৃদরোগকে নীরব ঘাতক উল্লেখ করে বলেন, ‘হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি।’
তিনি হৃদরোগ চিকিৎসা সহজলভ্য এবং এর ব্যয় কমানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বুকে ব্যথা হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার উপদেশ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর মোস্তফা জামান হৃদরোগ প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এর ৩০ শতাংশ মৃত্যু হৃদরোগের কারণে হয়। হৃদরোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ সহজ। প্রতিটি নাগরিকের হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ তৈরিতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’
এ জন্য তিনি ধূমপান বর্জন, সাদাপাতা, জর্দা পরিহার, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার, নিয়মিত হাঁটাহাটি এবং ব্যায়াম করার কথা বলেন।
ওয়াল্ড হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য উল্লেখ মোস্তফা জামান জানান, বিশ্বে প্রতিবছর অসংক্রামক রোগে চার কোটি ১০ লাখ লোক মারা যান। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৯ লাখের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি।
এ ছাড়া বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৩৫ বছরের কম বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি উন্নত বিশ্বের সমবয়সী মানুষের তুলনায় ১৭ গুণ বেশি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ক্লাব সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং ল্যাব এইড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসান হাফিজ, যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম ও আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়া, কাজী রওনাক হোসেন, শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা, শাহনাজ বেগম পলি, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ভানুরঞ্জন চক্রবর্তীসহ ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা।