ইউক্রেনে হামলা আরও জোরালো করেছে রুশ সেনারা

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের তিন দিক থেকে হামলা আরও জোরদার করেছে। হামলার সপ্তম দিনে গতকাল বুধবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খারকিভ, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মারিওপোল এবং উত্তরাঞ্চলের চেরনিহিভ শহরে বিমান ও গোলা হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী খেরসন দখলে নিয়েছে তারা। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার ছত্রীসেনারা নেমে শহরটির দখল নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

লড়াইয়ের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তের গোমেলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের দ্বিতীয় দফা সমঝোতা বৈঠক হতে পারে। বুধবার রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে, বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা এবং সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে ১৪১ এবং বিপক্ষে ৫ ভোট পড়েছে।

সাত দিনের হামলায় ইউক্রেনে দুই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে দেশটির জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, দেশজুড়ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা হামলায় চার শর বেশি জায়গায় আগুন লেগেছে। আর ৪১৬টি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এই সাত দিনে প্রায় ছয় হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল প্রথমবারের মতো বলেছে, সাত দিনে ৪৯৮ জন রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো গতকাল রাজধানীবাসীকে রুশ বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ নিয়ে সতর্ক করেছেন। নাগরিকদের ঘরে থাকার পাশাপাশি নগরীকে রক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শত্রুসেনারা আরও কাছাকাছি চলে আসছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং কিয়েভকে রক্ষা করব! সব কিয়েভানের প্রতি আমার আহ্বান, দুর্গ যেন না হারাই।’

গত বৃহস্পতিবার হামলা শুরুর পরদিনই কিয়েভে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন রুশ সেনারা। প্রতিরোধের মুখে তাঁদের সে চেষ্টা সফল হয়নি। শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান নিয়ে আছে রুশ সেনাদের একটি বহর। এখন উত্তর দিক থেকে কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে আরেকটি বিশাল বহর। ৪০ মাইল সড়কজুড়ে থাকা ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানের এ বহর কাছাকাছি পৌঁছালে একযোগে আক্রমণ চালানো হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কৃষ্ণসাগরের উপকূলবর্তী শহর খেরসনে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বসবাস। রুশ সেনারা এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের যে কটি শহর দখলে নিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে খেরসনই সবচেয়ে বড়।

ইউক্রেনে আল-জাজিরার প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু সিমনস বলেছেন, খেরসন শহরটি কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই শহর দিয়েই রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়া অঞ্চলের সঙ্গে ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ ঘটে।

রুশ সেনারা এখন দক্ষিণ-পূর্বের আরেক শহর মারিওপোল নিয়ন্ত্রণে নিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। আজভ সাগর তীরবর্তী এই শহরের সৈকতের পুরোটা রুশ বাহিনীর দখলে। শহরের মেয়র বলেছেন, গত মঙ্গলবার থেকে শহরে ব্যাপকভাবে গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি।

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও আক্রমণ জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। দুই দিন ব্যাপকভাবে গোলা নিক্ষেপের পর গতকাল সেখানে নেমেছেন রাশিয়ার ছত্রীসেনারা।

ইউক্রেন সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়ার সেনারা আকাশপথে এসে খারকিভে নেমেছেন। একটি হাসপাতালে তারা হামলা করেছেন। দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলছে।

আঞ্চলিক গভর্নরের দপ্তর গতকাল জানায়, বিগত ২৪ ঘণ্টায় খারকিভে গোলা হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা কর্মকর্তারা গতকাল সকালে আরও চারজন নিহত হওয়ার কথা জানান।

ইউক্রেনে বিক্ষোভের মুখে ২০১৪ সালে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ। রাশিয়া এখন তাকেই ইউক্রেনের নতুন নেতা ঘোষণা করতে চায় বলে ইউক্রেনভিত্তিক একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা নামের পত্রিকাটি জানিয়েছে, ইয়ানুকোভিচ এখন বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে আছেন। ২০১৪ সালে তিনি রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থীর ঢল অব্যাহত রয়েছে। হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহে ইউক্রেনের ৮ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com