নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডসহ নানা আশঙ্কায় দেশের সব কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। গত শনিবার দেওয়া ওই নির্দেশনায় প্রত্যেক কারা কর্তৃপক্ষকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার এবং বন্দিদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক বন্দি ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
কারাগারে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও বন্দি পলায়নের আশঙ্কায় এই রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে কারা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সব কারাগারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছেন। যেসব কারাগারে সন্ত্রাসী, দাগি অপরাধী, জঙ্গি, দুর্ধর্ষ বন্দি এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা বন্দি রয়েছেন, সেসব কারাগারে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে এর আগেই ৫ আগস্ট বিষয়টি নজরে কারা কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরে কারাগারটির নিরাপত্তায় বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের এ ঘটনাকেও সব কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারির ক্ষেত্রে আমলে নেয়া হয়।
কারা সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৭৩টি কারাগারে মোট বন্দি ধারণক্ষমতা রয়েছে ৪৩ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪১ হাজার ১৭১, নারী ১৯৮৬ জন। কারাগারগুলোয় মোট বন্দি রয়েছেন ৭৭ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৫ হাজার ৭১ জন এবং নারী ২৭৩২ জন। এসব কারাগারে কয়েদি রয়েছেন ১৮ হাজার ৮৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৮০৭৮ জন, নারী ৮০৮ জন।
এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন ৬ হাজার ৭২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৪২৫ জন এবং নারী ৩০৪ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ২৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৫৩১ জন, নারী ৯০ জন। বিদেশি বন্দি ৩৯৯ জন এবং বিডিআর ৫৩৮ জন।
১৬২ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত (শ্রেণিপ্রাপ্ত) বন্দি রয়েছেন উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী ৪১ জন, সাবেক এমপি ৩৯ জন, সরকারি কর্মকর্তা ৭৬ জন এবং অন্যান্য ৬ জন রয়েছেন কারাগারগুলোতে।
জানা গেছে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টাসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে । আবার কারাগারের ভেতরে আওয়ামী লীগের যেসব সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মী আছেন, তারাও কারাগারের ভেতরে বড় ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারেন বলে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য রয়েছে। যে কারণে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কারা মহাপরিদর্শকের দপ্তর থেকে সব কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি কারাগারগুলোর বন্দি ব্যবস্থাপনা নতুন করে ঢেলে সাজাতেও বলা হয়েছে। কারাগারের ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে যত ধাপ রয়েছে, এর সবগুলোই গত শনিবার রাত থেকে বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কয়েকটি কারাগারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জানা গেছে, কারা অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর দেশের সব কারাগারের প্রধান ফটকে শনিবার রাত থেকেই অস্ত্রধারী কারারক্ষীদের সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দিদের সঙ্গে স্বজনের দেখা সাক্ষাতেও বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন্দিদের সেলগুলোয় কারা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যদের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন আদালতে হাজিরা শেষে বন্দিদের কারাগারে ঢোকানোর সময় সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি করা হচ্ছে যেন বন্দিরা অস্ত্র, গুলি, চাকুসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক বস্তু নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে কারাগারের চৌহদ্দিতে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া কারাগার থেকে বন্দিদের আদালতে আনা-নেওয়ার সময় যাতে বন্দি ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।