ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের আদেশ বহাল

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪

বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় ভর্তিকৃত প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

রোববার (১৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। ভিকারুননিসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম।

এর আগে ৭ জুলাই বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় ভর্তিকৃত প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

গত ২৭ জুন বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় ভর্তিকৃত প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল থাকবে বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় প্রকাশ করা হয়।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক–আল–জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে বলা হয়, ১৫ দিনের মধ্যে ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে সিরিয়াল অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আর ভালো ভর্তি প্রক্রিয়া, জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে একটি অনুসন্ধান কমিটি করতে বলা হয়েছে।

পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।

ভিকারুননিসায় ভর্তি নিয়ে বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগ এনে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি-ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। তার ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) একটি স্মারক হাইকোর্টে উপস্থাপন করে।

মাউশির ওই আদেশ মতে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ করেনি। ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার প্রক্রিয়া ছিল বিধিবহির্ভূত। এসব ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫৯ জন। এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে শিগগিরই মাউশিকে অবহিত করার অনুরোধ করা হলো।

এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করে। ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের পর এখন অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে শূন্য আসনে ভর্তি নিতে গত ৬ মার্চ নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে বাতিলকৃত শিক্ষার্থীর অভিভাবক আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

আপিল বিভাগ ২০ মার্চ হাইকোর্টে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেন। এই সময় পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল ও অপেক্ষমাণদের ভর্তির ওপর স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ভর্তি বাতিল হওয়া ১২০ শিক্ষার্থীর পক্ষে আরেকটি রিট করা হয়।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৫ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। পৃথক রুলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে ২১ মে রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে বলা হয়, নির্দিষ্ট বয়সসীমার পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীদের (আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের) ফিল্টার করার জন্য সফটওয়্যারে কোনো প্রোগ্রাম স্থাপন করা হয়নি। এরমধ্যে গত বছরের ২ ডিসেম্বর অযোগ্য ১৬৯ শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও অন্যান্য অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত করতে অনুসন্ধান করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পুনরাবৃত্তি না হয় এবং নিষ্পাপ শিশুরা কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অদক্ষতা ও অপকর্মের বিষয়বস্তু না হতে হয়।

রায়ে আরও বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিকারুননিসার পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করবে। অনুসন্ধান কমিটি আরও ভালো ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করার এবং অপরাধীদের খুঁজে বের করার পরামর্শ দেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন অনুযায়ী চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগের সচিবকে ৩ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি করতে বলা হয়। অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি করতে বলা হয়। বাকি দুই সদস্যের মধ্যে একজন শিক্ষা বোর্ড থেকে অপরজন আইটি এক্সপার্ট বুয়েট থেকে যুক্ত করতে বলা হয়েছে।

এই রায়ের অনুলিপি শিক্ষা সচিব, বুয়েটের উপাচার্য এবং শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com