জনগণ ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের পতন দিবস উদযাপিত করবে: রিজভী

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা: তুমুল আন্দোলনে-জনজোয়ারে ইলেকশন ভাঁওতাবাজীর নামে সিলেকশন নির্বাচনি নাটক ভন্ডুল হয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি ভোটের নামে রাস্ট্রের শত শত কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হবে অত্যন্ত নিখুঁত ধূর্ততায়, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে। ইলেকশনের দিন রাত্রে পাঠ করা হবে গণভবনের তালিকা। জনগণ আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দিবস উদযাপিত করবে ইনশাআল্লাহ।’

শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই জনগণের সমস্ত মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আজ অত্যাচারী শাসকের পদতলে রাখা হয়েছে। কেবল জনগণই নয়, গোটা দেশকে জিম্মী করেছে মাফিয়াচক্র।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন জনগণ তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পরবর্তী মেয়াদের জন্য কাদের হাতে অর্পণ করতে চায় তা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের আলোকে নির্ধারণ করে দেয়। সেই নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বানিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন শেখ হাসিনার দান-দক্ষিনা, খয়রাত, বিলি-বন্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার-করুণায় পরিণত হয়েছে। ২০১৪ বিনা ভোটে অটোপাসের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট ডাকাতির পর এবার ইলেকশন ভাঁওতাবাজীর নামে সিলেকশন করা হচ্ছে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচন এলে যে আনন্দ-উৎসবের জোয়ার নামে জনপদগুলোতে তার পরিবর্তে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে সাবাদেশে। যারা আওয়ামী লীগ করে তারা ছাড়া গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। বহু গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। মনোনয়ন নিয়ে ইতিমধ্যে খুনোখুনি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে শেখ হাসিনা উৎসবের বদলে ভয়, আতংক ও শোকে পরিণত করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা নমরুদ-ফেরাউনের মতো নিজেকে সর্বময় ক্ষমতার অধীশ্বর ঘোষণা করে সবকিছুকে নিজের ক্রীড়নকে পরিণত করে নিয়েছেন। যা ইচ্ছে তাই করছেন। স্বৈরতন্ত্রের ক্রমোন্নতির ক্রমাগত বিকাশ ঘটাতে ক্ষমতায় থাকার জন্য গোপন-প্রকাশ্য বহু বাহিনী তৈরি করেছেন। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে টার্গেট করে করে অর্থ এবং এমপি বানানোর প্রলোভনে কিংসপার্টি -ভূইঁফোড় পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢুকানো হচ্ছে। তবে কোনো নীতিবান, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নিতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘কতিপয় ডিগবাজীমার্কা-ভ্রষ্টচারী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচনি রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা বানাতে কব্জা করেছে। টাকার বিনিময়ে খরিদ হওয়া এইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা টাকা ও ক্ষমতার মুলোর লোভে পড়ে ডিগবাজী দেওয়ার পর এখন বুঝতে পারছেন তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না। পাতানো খেলার সাজানো নির্বাচনে ‘হার হাইনেস’ যাকে যাকে চাইবেন, তারাই হবেন এমপি, তারাই হবেন ক্ষমতাশালী। শোনা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার জোটসঙ্গী একটি দলের শীর্ষ নেতা এই পাতানো ভূয়া সিলেকশনের নির্বাচনে যেতে না চাওয়ায় রাষ্ট্রীয় এজেন্সি দিয়ে সেই নেতাকে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জিম্মি করা হয়। পরে তাদের নির্বাচনের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে নেতাদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে রাতের বাহিনী। এইভাবে জোড়াতালী দিয়ে নির্বাচনের পথে হাটছে মাফিয়াচক্র।’

রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের বর্তমান আস্তানা গণভবন-বঙ্গভবনে ছুটোছুটি করছেন তাদের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আমার আহ্বান, অবৈধ ক্ষমতার দাপটের চেয়ে জনগণের ভালোবাসায় ধন্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানের। অতএব, নিজেদেরকে অসম্মানিত করবেন না। বারো কোটি ভোটারের লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার আদায়ের দাবির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।’

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার দুর্নীতি-লুটপাট আর দুঃশাসনে বিপর্যস্ত দেশের প্রতিটি কৃষক শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, নিম্মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে বেঈমানি করবেন না। যারা বর্তমানে সাময়িক লোভ-লাভের আশায় ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন তাদের নামও রাষ্ট্রীয়ভাবে বেঈমানদের তালিকায় চিহ্নিত থাকবে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জনগণের দিনকাটছে অভাবে-অর্ধাহারে-অনাহারে। এমনকি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও সংসারের টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক পরিবার। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে চাল-ডাল-আলু-তেল-পেঁয়াজ-রসুন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনসের দাম। দেশে উৎপাদনশীল এইসব পণ্যের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে কেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এর কারণ, বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে জনগণ নয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রয়োজন মাফিয়া চক্র। ফলে মাফিয়া চক্রকে খুশি রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘তাই এই সরকারকে যত দ্রুত ভূলুণ্ঠিত করবেন তত দ্রুত জনগণের মুক্তি মিলবে। ইতিমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশর ১২ কোটি ভোটার বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আপনারা যদি তারুণ্যের শক্তি নিয়ে নিজেদের লুন্ঠিত ভোটের অধিকার আদায়ে রাজপথের দখল নেন বিশ্বাস রাখুন এবার আর ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে ভাগবাটোয়ারা নির্বাচন করা সম্ভব হবেনা। এই আন্দোলনে আপনি আমি-আমরা একা নই। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিও আর বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘একতরফা নির্বাচন করতে বর্তমানে দেশব্যাপী আবারও পুলিশের পাশাপাশি আদালতকে করা হয়েছে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসকের পৈশাচিক প্রবৃত্তির লীলাকেন্দ্র। এই প্রতারক মাফিয়া সরকার একদিকে বলছে নির্বাচনে আসুন অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ আন্দোলনে সক্রিয় ও সাহসী নেতাদের টার্গেট করে বেছে বেছে তাদেরই কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। পুরনো মামলায় সাজা দেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে দুই বছরের নিচে কারোর সাজা হচ্ছে না। কারণ দুই বছরের সাজা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিবন্ধক। এ সব কারাদণ্ড প্রদান করা হচ্ছে ‘আজব আদালত’ থেকে-যেখানে মৃত নেতা, গুম হওয়া নেতাদেরও রেহাই নেই। মৃতদেরও সাজা দিচ্ছেন শেখ হাসিনার পুতুল আদালত। গত দেড় মাসে বিএনপির ৫৮২ জন নেতাকর্মীকে প্রহসনের বিচারে দণ্ডিত ঘোষণা করা হয়েছেন। আসামিদের অনুপস্থিতিতে চার্জ গ্রহণ ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় আসামিকে সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শোনার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে দণ্ড ঘোষণা করা হচ্ছে। সমস্ত মামলার বাদী পুলিশ। রাত-দিন আদালত খুলে আওয়ামী দলদাসরাই সাক্ষী-তারাই বিচারক। ফরমায়েশি রায়ও দেয়া হচ্ছে প্রহসনের নির্বাচনের মতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিরোধী নেতাদের সাজা ও তাদের আটক করা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শাসকদের পুরনো প্র্যাকটিস। জোর করে অনেক কিছু করতে চায় তারা। কিন্তু স্বৈরাচারীদের আখেরে কোনো লাভ হয় না। শেখ হাসিনাকে সিংহাসনচ্যুত করতে দেশের জনগণ সর্বান্তকরণে অঙ্গিকারবদ্ধ। পতনই তাদের করুণ ভবিতব্য। এক দফার আন্দোলন আরও বিস্তৃত, বেগবান ও তেজোদীপ্ত হবে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com