আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই: প্রধানমন্ত্রী

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। শান্তি সমৃদ্ধি বয়ে আনে, আর যুদ্ধ কেবল ধ্বংস করে। সেজন্য আমি যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানাচ্ছি। এই অস্ত্র বানানোর এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে অর্থ ব্যয় হয় সেই অর্থ সারাবিশ্বের শিশুদের খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং তাদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হোক। সেটাই আমাদের দাবি, আমরা তা-ই চাই। আমরা সবসময় শান্তির পক্ষেই কাজ করি।

বুধবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২৩’ এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের মধ্যে ‘শেখ রাসেল পদক-২০২৩’ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পদক-২০২৩’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। বিজয়ীদের মাঝে ‘শেখ রাসেল পদক ও স্মার্ট বাংলাদেশ পদক’ প্রদান করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা কখনই মানবজাতির জন্য ধ্বংসের পরিবর্তে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। যুদ্ধে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ সারাবিশ্বের শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হোক।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের ফিলিস্তিনের ওপর আগ্রাসনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সারা বিশ্ব যে যুদ্ধ চলছে, ফিলিস্তিনে নারী-শিশু মারা যাচ্ছে, ইসরাইলেও মারা গেছে। গতকাল দেখলাম হাসপাতালে বোমা হামলা করা হয়েছে। সেখানে মানুষ মারা গেছে, শিশু মারা গেছে, দেখলাম রক্তাক্ত সেই শিশুদের চেহারা। আমি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বলবো-যুদ্ধ বন্ধ করেন। অস্ত্র প্রতিযোগিত বন্ধ করুন। যুদ্ধ আর অস্ত্র মানুষের মঙ্গল বয়ে আনে না। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় শিশু আর নারীরা। আর যুবকরা দেয় জীবন। সন্তান হারান পিতা-মাতা। পিতা-মাতা হারান সন্তান। তাদের যে কী বেদনা সেটা আমরা জানি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধের ভায়বহতা দেখেছেন, কীভাবে রাস্তায় রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে রয়েছে। আর ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর প্রবাসে রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হতে হয়েছে তাঁকে। ’৭৫ এর আমরা দুই বোন এবং আমাদের পরিজনরা জানে এই কস্ট টা কী। আমাদেরতো রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছে। সেতো আরো কষ্ট। নিজের নাম পরিচয়টা দিতে পারবোনা, অন্যের দেশ, ভাষা আলাদা। সেখানে থাকতে হয়েছে কবে ফিরবো দেশে একটা অনিশ্চয়তা-সেভাবেই তো ছ’টি বছর কাটাতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমার ছোট্ট রাসেল সোনার মত, আর যেন কাউকে এভাবে জীবন দিতে না হয়। একটা ফুল না ফুটতেই যেন ঝরে না পড়ে। সেটাই আমার কামনা। কবি সুকান্তের ছাড়পত্র কবিতার কয়েকটি পংক্তি তুলে ধরে এ সময় বিশ্বকে নবজাতকের বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তিনি।

শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ তোমরা যারা শিশু এখানে আছো, বাবা-মার কথা শুনবে। ঠিকমতো লেখাপড়া করবে। লেখাপড়া ছাড়া মানুষ বড় হতে পারে না। আমাদের ছেলেদেয়েদের মধ্যে এই আকাংখা থাকবে, আমরা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবো। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।

তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়ন চায় এজন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ আমাদের টার্গেট। আর আমাদের আজকের এই শিশুরাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের দক্ষ সৈনিক হবে। সরকার গঠন করার পর থেকে আমার প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশকে আর্থসামাজিকভাবে উন্নত করা। ছোট্ট শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত স্কুল করে দেয়া, বই দেয়া এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা করা। এসবের মধ্যদিয়ে শিশুদের গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছি। ছোটবেলা থেকে যেন খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার অভ্যাস হয়, সে ব্যবস্থা করেছি।

৭১ সালের বন্দিজীবনের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হয় ১৬ ডিসেম্বর আমরা তখনো বন্দী। ‘রুদ্ধ দ্বার, মুক্ত প্রাণ’। একবার চেষ্টা করেছে ভেতরে এসে আমাদের ওপর হামলা করতে। একটা ছোট্ট তার আমাদের বাঁচিয়ে দেয়। একটা কাপড় ঝোলানো তারের সঙ্গে লেগে সে অফিসার পড়ে যায়, পরে সে ফিরে যায়। পরে কর্নেল অশোক তারা এসে ১৭ ডিসেম্বর আমাদের মুক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বন্দিখানা থেকে রাসেল সেনাদের প্যারেড দেখেছে। গ্রামের বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে সে প্যারেড করতো। বাচ্চাদের পুরস্কারও দিতো। তার জীবনের বড় স্বপ্ন ছিল- সে বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবে। কিন্তু তার সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। পচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বাবা-মা, ভাই সবাইকে হত্যার পর সব শেষে রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তখন আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আর আমি বিদেশে ছিলাম। ছয়টি বছর দেশে আসতে পারিনি। আর আমাদের এই হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকারও ছিল না। জিয়া ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনীদের বিচারেরর পথ রুদ্ধ করেছিল।

তিনি আরও বলেন, শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদ ১৯৮৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আমি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সে সময় দেশে স্বৈরশাসন চলছিল। ছেলে-মেয়েদের খেলাধূলা, সঙ্গীত চর্চা বা সেধরনের কোন উন্মুক্ত পরিবেশই তখন ছিলনা। ইতিহাস বিকৃতি চলছিল। স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের এবং বিজয়ের ইতিহাস, এত আত্মত্যাগ এত রক্তদানের ইতিহাস আমাদের শিশুরা সে সময় জানতেই পারেনি। শিশুদের সে সময় স্বাধীন দেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ এই সংগঠনের অনেক শিশু দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com