আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিমা দেশের সরকার থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায়ই দ্বিচারিতার অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে তাদের এসব আচরণ নগ্নভাবে সামনে আসতে থাকে। রুশ অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে একের পর এক পদক্ষেপ নিতে থাকে বিখ্যাত পশ্চিমা কোম্পানিগুলো। তবে এবার ঠিক তার উল্টো চিত্র দেখা গেল ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময়।
গত বছর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর কিয়েভকে আর্থিক সহায়তা ও সমর্থন দিতে থাকে এডিডাস, ডিসনি, টয়োটা থেকে শুরু করে ব্যাংক অব আমেরিকার মতো কোম্পানিগুলো। এমনকি ইউক্রেনের সমর্থনে দেশটির পতাকা ব্যবহার করেন অ্যাপলের সিইও টিম কুক ও সিটি গ্রুপের সিইও জেন ফ্রেজার। এক হাজারেরও বেশি কোম্পানি মস্কো থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে অথবা পরিধি কমিয়ে এনেছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরায়েলি হামলার পর একেবারেই চুপ রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের গুরুতর এই সংঘাত নিয়ে বিন্দুমাত্র মন্তব্য করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। উপরন্তু ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গেছে মাইক্রোসফট, গুগল, জেপি মরগ্যান, গোল্ডম্যান শ্যাস ও হিউলেট প্যাকার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিপণন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ঐতিহাসিকভাবে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ইন্ডাস্ট্রি পাবলিকেশন ক্যাম্পেইন এশিয়ার সম্পাদক রাহাত কাপুর জানান, ব্যবসা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে ঐতিহাসিক এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে নিজেদের সতর্ক রাখে কোম্পানিগুলো। এ ছাড়া হামাসের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকটাই বিপজ্জনক। কারণ এসব দেশে হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি সমাবেশ আয়োজন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বলা হয় এসব র্যালি হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে ফ্রান্সে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনপন্থি যে কোনো বিক্ষোভ ও র্যালিকে সন্ত্রাসবাদের সমর্থন হিসেবে দেখা হবে বলে সতর্ক করে।
ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির বিজনেস স্কুলের ডিন কার্ল রোডস জানান, ইসরায়েলি হামলায় অসংখ্যা ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হওয়ার পরও পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তাদের এসব প্রতিক্রিয়া সাধারণত মানবিক দিকের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক হয়ে থাকে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ না করার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান সমালোচনার মুখেও পড়েছে। ইসরায়েলপন্থি লবিস্ট গ্রুপ অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগের সিইও জোনাথন গ্রিনব্ল্যাট জানান, হামাসের হামলার পর আমেরিকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে হতাশাজনক ও বিপর্যয়কর ছিল।