বাংলাদেশে এই প্রথম ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকা : বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু রোগের টিকার সফল পরীক্ষা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকেরা এ টিকার সফল পরীক্ষা করেছেন।

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন, ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা গেছে, চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই এ টিকা কার্যকর। এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে টিভি-০০৫ (টেট্রাভেলেন্ট)।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) টিকার এই সফল পরীক্ষা নিয়ে একটি প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘দ্যা ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈবচয়ন ভিত্তিক দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে টিভি-০০৫ টেট্রাভ্যালেন্ট লাইভ-অ্যাটেনুয়েটেড ডেঙ্গু টিকার নিরাপত্তা, ইমিউনোজেনিসিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সক্ষমতা এবং তিন বছর পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়িত্বের অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়েছে। টিকা দেওয়ার পরে বেশির ভাগ স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে চারটি ডেঙ্গুর সেরোটাইপের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। যারা পূর্বে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি পাওয়া গিয়েছে। যদিও গবেষণাটি কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি, তবে এখন পর্যন্ত টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো ঘটনা শনাক্ত করা যায়নি।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, গবেষণালব্ধ এই ফলাফলগুলো ডেঙ্গু-প্রবণ জনগোষ্ঠীতে ব্যাপক হারে টিভি-০০৫ ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তোলার পাশাপাশি, তৃতীয় ধাপের কার্যকারিতা ট্রায়াল পরিচালনার জন্য সমর্থন জোগাড় করতে সহায়তা করবে।

টিকার গবেষকদের একজন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এটি একটি আশাব্যঞ্জক ঘটনা। যেহেতু দেশে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রকোপ চলছে তার মধ্যে এটি একটি আশার খবর।

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর টিকা টিভি-০০৫ টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা হয়েছে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ শুরু করে শেষ হয় ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।

এতে অংশ নেন ১৯২ জন, তারা সকলেই স্বেচ্ছায় অংশ নেন। প্রাপ্তবয়স্ক ১৮-৫০ বছর (২০ জন পুরুষ এবং ২৮ জন মহিলা), কিশোর ১১-১৭ বছর (২৭ জন পুরুষ এবং ২১ জন মহিলা), শিশু ৫-১০ বছর (১৫ জন পুরুষ এবং ৩৩ জন মহিলা), এবং ছোট শিশু ১-৪ বছর (২৯ জন পুরুষ এবং ১৯ জন মহিলা), এই চারটি বয়সের শ্রেণিতে বাছাই করে টিকা বা প্লাসিবো করা হয়। অর্থাৎ প্রতি দলে ৪৮ জন করে অংশগ্রহণ করেছিল। এসব ব্যক্তির কারও কারও আগেই ডেঙ্গু হয়েছিল আবার কারও হয়নি। অংশগ্রহণকারীরা সবাই ছিলেন বাংলাদেশি। টিকার বেশির ভাগ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল সামান্য।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাঝে অন্যতম ছিল ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ। ১৪৪ জন টিকা গ্রহণকারীর ৩৭ জনের (২৬%) এবং ৪৮ জন প্ল্যাসিবো প্রাপকের মধ্যে ৬ জনের (১২%) ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছিল ফুসকুড়ি। টিকা পাওয় ব্যক্তিদের মধ্যে জ্বর ছিল ৭ জনের (৫%) ক্ষেত্রে এবং আরও ৭ জন গিঁটে ব্যথা (১০৮-এর ৬%) অনুভব করেছেন। টিকা গ্রহণের ১৮০ দিন পর সকল অংশগ্রহণকারীর (১৪২ জন) মাঝে বেশির ভাগ সেরোটাইপের (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩, ডেন-৪) বিপরীতে সেরোপজিটিভ দেখা গেছে।

গবেষক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন তাদের আমরা ২০২০ সাল পর্যন্ত দেখেছি। তাদের কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি। এই টিকার একটি একটি ডোজই সুরক্ষা দিতে পারে। তবে আরও গবেষণষার প্রয়োজন রয়েছে এ টিকা নিয়ে। কারণ বাংলাদেশে এর দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল বা পরীক্ষা হয়েছে। এই টিকাটি ৪২টি বিভিন্ন ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ভারতের এর তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু হয়েছে।

দামের প্রসঙ্গে শফিউল আলম বলেন, ভারতের তিনটি কোম্পানি এবং ভিয়েতনামের একটি স্থানীয় ওষুধ কোম্পানি এই টিকা বাজারজাত করার সুযোগ অনুমতি পেয়েছে। যেহেতু স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বাজারজাত করার সুযোগ পেয়েছে তাই এর দাম সাশ্রয়ী হবে বলেই ধারণা করি।

টিকাটি আবিস্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ)। এ টিকা গবেষণার সঙ্গে মোহাম্মদ শফিউল আলম ছাড়াও জড়িত ছিলেন আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রাশিদুল হক, সাজিয়া আফরিন এবং মো. মাসুদ আলম।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com