ভারতে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই, দাবি মোদির

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে ধর্মীয় বৈষম্যের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার দাবি, তার সরকারের অধীনে ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হয় না।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দাবি করেন।

যদিও ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ভিন্নমতাবলম্বী এবং সাংবাদিকদের নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত অভিযোগ সামনে এনেছে বহু মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। শুক্রবার (২৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফর করছেন। ২০১৪ সালে প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবারই দেশটিতে সফরে গেছেন এবং তবে প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণের কারণে মোদির এই সফরটি যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর বলে বিবেচিত হচ্ছে।

তবে গুরুত্বপূর্ণ এই সফরের শুরুতেই মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মোদি। এমনকি মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠিও লিখেছেন ৭৫ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা।

ওই চিঠিতে ওয়াশিংটন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ভারতে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে অনুরোধ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের ওই ৭৫ জন সদস্য। মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই আইনপ্রণেতারা সবাই ডেমোক্র্যাট দলীয়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তিনি হোয়াইট হাউসে আলোচনার সময় মোদির সাথে মানবাধিকার এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

পরে প্রেস কনফারেন্সে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে ‘আপনার দেশের মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকারের উন্নতি এবং বাকস্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য আপনি কি পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক,’ এমন প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, তাদের উন্নতি করার দরকার নেই।

মোদি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সংবিধান ও আমাদের সরকার এবং আমরা প্রমাণ করেছি, গণতন্ত্র ঠিকমতো চলতে পারে। জাতি, ধর্ম, ধর্ম, লিঙ্গ ইস্যুতে ভারতে (আমার সরকারে) বৈষম্যের কোনো স্থান নেই।’

রয়টার্স বলছে, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত প্রতিবেদনে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভারতে মুসলমান, হিন্দু দলিত, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দেশটির সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এনেছে।

মোদির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
এদিকে নরেন্দ্র মোদির সফর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বহু সংখ্যক বিক্ষোভকারী হোয়াইট হাউসের কাছে জড়ো হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেন ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর অজিত সাহি। তিনি বলেছেন, ‘মোদির চিন্তা করা উচিত কেন প্রেস ব্রিফিংয়ে তাকে প্রথম প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। এটা সবার কাছে স্পষ্ট যে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।’

ভারতীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে হিন্দুত্ব ওয়াচ নামে একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রাকিব হামিদ নায়েক বলেছেন, ‘মোদির মন্তব্য (তার সরকারের অধীনে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই) সম্পূর্ণ মিথ্যা। ভারত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য একটি কালো গহ্বরে পরিণত হয়েছে।’

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি পাঁচবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক মর্যাদার সাথে এই সফরটিই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে মোদির প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। যদিও মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আশা করছে। কারণ চীনকে মোকাবিলায় ভারতকে পাশে রাখা প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। তবে মানবাধিকার কর্মীরা উদ্বিগ্ন যে, ভূরাজনীতির হিসেব-নিকেশে হয়তো ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো চাপা পড়ে যাবে।

আর এ কারণে বেশ কয়েকটি মার্কিন মানবাধিকার গোষ্ঠী আগেই মোদির সফরের সময় বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, চীনকে মোকাবিলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের গুরুত্ব এবং উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ওয়াশিংটনের পক্ষে ভারত ও তার সরকারের মানবাধিকারের সমালোচনা করা বেশ কঠিন করে তুলেছে। আর এ কারণেই বৃহস্পতিবার মোদির জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে দিয়েছেন বাইডেন।

রয়টার্স বলছে, মার্কিন কংগ্রেসের দুই মুসলিম নারী সদস্য প্রতিনিধি ইলহান ওমর এবং রাশিদা তালাইব প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের মতো অন্যান্য প্রগতিশীল আইন প্রণেতাদের সাথে নিয়ে বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে মোদির ভাষণ বয়কট করেছেন। মূলত ভারতীয় ভিন্নমতাবলম্বী এবং সংখ্যালঘুদের – বিশেষ করে মুসলমান – ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে মোদির ভাষণ বয়কট করেন তারা।

মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, মোদির আক্রমনাত্মক হিন্দু জাতীয়তাবাদ ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য জায়গাকে সংকীর্ণ করে তুলেছে।

নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছেন, ভারত সরকারের নীতির সুবিধা সকলের কাছেই পৌঁছাচ্ছে। তবে মানিবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, মোদি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ভারতে ভিন্নমতাবলম্বী, সংখ্যালঘু এবং সাংবাদিকরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com