ঢাকা : সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আবারও ভোটারবিহীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। লেট ক্লিয়ারিংয়ের জন্য যাতে অনেক ড্যামারেজ দিতে না হয়, সে বিষয়ে ইতিহাসের শিক্ষা থেকে সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত। শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, কারও চাপের কাছে মাথা নোয়াবেন না বলেছেন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। অবৈধ লুটের মালের প্রতি লালসা লুটেরারা কখনোই ত্যাগ করতে পারে না। তাই অবৈধ ক্ষমতার প্রতি গণতান্ত্রিক শক্তির যেকোনো চাপেই তাদের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা যায়। ইতোমধ্যেই পরিবর্তনের দ্রুততা এতটাই প্রখর হয়ে উঠেছে যে, অবৈধ সরকারের মনে বিভীষিকা বিস্তার লাভ করেছে। একমাত্র শেখ হাসিনার একগুঁয়েমির কারণেই রাজনীতির ময়দান স্থিতিশীল, নিরাপদ, শান্ত হয়ে উঠছে না।
তিনি বলেন, গত ৯ জুন কুমিল্লায় যুবদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের নৃশংসতার এক অভিনব পৈশাচিক হামলার দৃশ্য দেশবাসীকে হতবিহব্বল করেছে। পুলিশ যে শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার চোরাস্রোত দিয়ে সৃষ্টি সেটি দেখা গেছে ওই ঘটনায়। সেদিনের ঘটনা ছিল তীব্র দুঃশাসনের এক জলন্ত দৃষ্টান্ত।
নিরপরাধ ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণকারী পুলিশ সদস্যদেরই একজন এসআই খাজু মিয়া বাদী হয়ে ভুক্তভোগীদের ১৮ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৬০/৭০ জনকে আসামি করে কোতয়ালী থানায় একটি মিথ্যা মামলা করেছে। পুলিশের এহেন আচরণ গণতন্ত্রকামী শক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নিশিরাতের সরকারের একটি হিংস্র রসিকতা। ওই হামলায় সদর সার্কেলের এডিসি খন্দকার আশফাকুজ্জামান, কোতওয়ালী থানার ওসি আহমদ মঞ্জুর মোর্শেদ, এসআই খাজু মিয়াসহ ১০/১৫ জন পুলিশ সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন বলে রিজভী জানান।
তিনি বলেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন আচরণ যা মূলত দণ্ডবিধি আইনের ধারা ১৪৭/৩৩৫৩০৭/৩৪/১৯৩/১৯৪/১৯৫ মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গত ১৪ জুন চট্টগ্রামে তারুণ্যের মহাসমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মীরসরাই উপজেলা ছাত্রদল নেত্রী নাদিয়া নুসরাতকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। এর ৩/৪ ঘণ্টা পর জোরারগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেল হাজতে পাঠায়। শেখ হাসিনা যুবলীগ-ছাত্রলীগকে উগ্রতা, নির্মমতা, হিংস্রতা, বর্বরতা এবং রক্তারক্তির চেতনায় লালন করেছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনের বীরত্বে এ সরকার দারুণ উল্লাসিত। নারী ও শিশুদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক আতঙ্কের নাম ছাত্রলীগ-যুবলীগ।
তিনি বলেন, জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম যদি আইনসম্মত দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে নাদিয়া নির্যাতিত হতো না। বরং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কথায় তিনি নাদিয়াকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। এই ওসি আওয়ামী দুষ্কর্মের সহযোগী। সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত ও পৈশাচিক হামলার ঘৃণা, ধিক্কার ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নাদিয়ার ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।
এছাড়া বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন, বসুরহাট পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ওবায়দুল হক রাফেল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইমুনের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। উল্টো বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মো. আবদুর রহিম, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।