ঢাকা: বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন ও কারাগারে থাকা সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে পিবিআই প্রধানের করা মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। এই মামলায় ইলিয়াস ও বাবুল ছাড়া আরও দুইজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- বাবুল আক্তারের বাবা মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও ভাই হাবিবুর রহমান লাবু। ১০ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক রবিউল ইসলাম আদালতে এ প্রতিবেদন জমা দেন।
আদালতে জমা দেওয়া ২০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বাবুল আক্তার স্ত্রী মিতু হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে দিয়ে পিবিআই প্রধান, পুলিশ এবং সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি ভিডিও তৈরি করেন।
বর্তমানে মামলার আসামি ইলিয়াস হোসেন বিদেশে অবস্থান করছেন। আর এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো বাবুল আক্তার আছেন কারাগারে। তার বাবা ও ভাই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। গতবছরের সেপ্টেম্বরে সাংবাদিক ইলিয়াস ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে ফেসবুক ও ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করেন।
এর আগে ২৭ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। মামলাটি তদন্ত করেন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রবিউল ইসলাম। গেল ২১ মার্চ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করে আদালত।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ঘটনার সময় এসপি বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় মিতু হত্যাকাণ্ডে তারই সংশ্লিষ্টতা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওই দিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল। সম্প্রতি এ মামলায় বাবুল আক্তারসহ সাত জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দিয়েছে পিবিআই। আদালত এই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন।
অভিযোগপত্রে যা আছে
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, বনজ কুমারের নেতৃত্বে মিতু হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকাকালে প্রধান আসামি মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নাম বেরিয়ে আসে। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে এবং পিবিআইয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে জেলে থাকা বাবুল আক্তার ও অন্য আসামিরা দেশ-বিদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক বিভিন্ন অপকৌশল ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন।
এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তার ও অন্য আসামিদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্ররোচনায় সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার ইউটিউব চ্যানেলে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ইলিয়াস হোসেন ভিডিওতে দেয়া বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি, পুলিশ এবং পিবিআই, বিশেষ করে বাদীর (বনজ কুমার মজুমদার) মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করার জন্য বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছেন, যা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগপত্রে ওই ভিডিওর বিভিন্ন অভিযোগ খণ্ডন করে বলা হয়, ইলিয়াস তার বক্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করা, রাষ্ট্রের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস করেছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, শুধু মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে মামলার ২ নম্বর আসামি মো. হাবিবুর রহমান লাবু, ৩ নম্বর আসামি আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও ৪ নম্বর আসামি বাবুল আক্তারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্ররোচনায় ১ নম্বর আসামি ইলিয়াস হোসেন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশ করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা যা জানালেন
পিবিআই প্রধানের মামলাটি তদন্ত করেন ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বাবুল আক্তার বিদেশে অবস্থান করা সাংবাদিক ইলিয়াসকে দিয়ে এগুলো করেছিলেন। আমরা সিআইডিতে বিশেষজ্ঞ মতামত জানতে চেয়েছিলাম। সেখানে এসব বিষয় প্রমাণিত হয়েছে। ২০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।