ঢাকা : দেশে পথশিশুদের ৮২ শতাংশ ছেলে এবং ১৮ শতাংশ মেয়ে। আর এ পথশিশুদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশই ঘর ছেড়েছে দারিদ্র্য বা ক্ষুধার কারণে। ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ ঘর ছেড়েছে মা-বাবা শহরমুখী হওয়ার কারণে। এ ছাড়া কাজের জন্য ঘর ছেড়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ শিশু। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পথশিশুদের জরিপ ২০২২ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
‘পথশিশুদের উপর জরিপ-২০২২’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের পথশিশুদের মধ্যে ৮২ শতাংশই ছেলে, আর বাকি ১৮ শতাংশ মেয়ে। বয়সের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ৫৪ শতাংশ পথশিশু ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী। ১৫ থেকে ১৭ বছরের পথশিশু রয়েছে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আর ৫ থেকে ৯ বছরের পথশিশু ১৯ দশমিক ২ শতাংশ।
বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পথশিশু আসে চট্টগ্রাম থেকে, শতাংশের হারে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। বরিশাল বিভাগ থেকে পথশিশু আসে ১৮ শতাংশ। আর ঢাকা বিভাগ থেকে পথশিশু হয় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘পথশিশুদের বিষয়ে হালনাগাদ সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না, জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে এনেছে। এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত এখন পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে।’
ভবিষ্যতে সরকারের প্রয়োজনে এ ধরনের জরিপ পরিচালনায় বিবিএস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এ ধরনের জরিপ পরিচালনার জন্য বিবিএস ও ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানান।
বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিবিএস সবসময় জাতির প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখে সময়ানুগ ও নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যান প্রস্তুতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম বিবিএসের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। নিয়মিত বিভিন্ন শুমারির পাশাপাশি এ ধরনের চাহিদাভিত্তিক জরিপ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিবিএস সবসময় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগ্রহী।’
জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘সারা দেশে প্রথম পর্যায়ে শূন্য থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের ওপর কুইক কাউন্ট পরিচালনার মাধ্যমে স্যাম্পলিং ফ্রেম প্রণয়ন করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের ওপর পথশিশু জরিপ ২০২২ পরিচালিত হয়।’
জরিপে পথশিশুদের শিক্ষার বিষয়টিও উঠে আসে। এতে বলা হয়, দশজন পথশিশুর তিনজন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। সব পথশিশুর মধ্যে শুধু ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। খুব নগণ্যসংখ্যক পথশিশু নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছে। প্রায় চার ভাগের এক ভাগ পথশিশু ধূমপান করে এবং ১২ শতাংশ মাদকের নেশায় আসক্ত। ৬৪ শতাংশ পথশিশু তাদের পরিবারে ফিরে যেতে চায় না।
ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত এ জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, অতিথি ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট।