পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ: বাড়ছে দুর্ভোগ

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঢাকা : দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগও বাড়ছে। অনেক মানুষ নদীভাঙনে হারিয়েছেন ঘর-বাড়ি-স্থাপনা। আশ্রয় হারিয়ে তারা এখন দিশাহারা। দুর্গত এলাকায় সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনা খাবার ও গো-খাদ্যের। পাশাপাশি নানা রোগবালাই হানা দেওয়ায় অবস্থা এখন শোচনীয়।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কাল-পরশুর মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই মাসের মাঝামাঝি সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পাউবোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার এই ধারা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি কমছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বর্তমানে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলা বন্যাকবলিত। ৮টি নদীর পানি ১৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তুরাগ, কালীগঙ্গা, পদ্মা, আত্রাই ও ধলেশ্বরীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

পদ্মা নদীর পানি সুরেশ্বর, মাওয়া, ভাগ্যকুল ও গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি আরিচা, মথুরা, পোড়াবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, কাজীপুর, সারিয়াকান্দি, বাহাদুরাবাদ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি—এই ৯টি স্টেশনে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আত্রাই নদীর পানি বাঘাবাড়ী, ধলেশ্বরীর পানি এলাসিন, তুরাগের পানি কালিয়াকৈর ও কালীগঙ্গার পানি তারাঘাটে বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। এছাড়াও ধরলার পানি কুড়িগ্রাম ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ:

যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কমতে শুরু করেছে পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি কমেছে ১৪ সেন্টিমিটার, কাজিপুর পয়েন্টে কমেছে ১১ সেন্টিমিটার এবং বাঘাবাড়ীতে কমেছে ৯ সেন্টিমিটার। তবে এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। টানা তিন সপ্তাহের বেশি দিন ধরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে পানি কমতে শুরু করে। এতে বানভাসি মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও দুর্ভোগ কমেনি। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও আবাদি জমি।

মানিকগঞ্জ:

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলে গত দুই সপ্তাহ ধরে অন্তত ২০ হাজার মানুষ বন্যার পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলের প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি হাঁটু পানি থেকে কোমর পানিতে ভাসছে। এতে পরিবার ও গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বানভাসি মানুষ। আবার অনেকেই বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। আবার অনেকেই ঘরের মধ্যে মাচা করে পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। বানভাসি এসব মানুষের কেউ খোঁজখবর নিচ্ছে না। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন চলছে বন্যার্তদের। জরুরি ভিত্তিতে এসব বানভাসির মধ্যে সরকারি বা বেসরকারিভাবে এলাকায় শুষ্ক খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অতি জরুরি বলে মনে করে স্থানীয় লোকজন।

টাঙ্গাইল:

গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি আট সেন্টিমিটার কমলেও এখনো বিপত্সীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে টাঙ্গাইলের সাতটি উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিলেও ত্রাণসহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বানভাসিদের।

ফরিদপুর:

গতকাল সকালে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, পাংশার সেনাগ্রামে ৬৫ সেন্টিমিটার ও রাজবাড়ী সদরের মহেন্দ্রপুরে বিপত্সীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফরিদপুর সদর, রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, পাংশা, দৌলতদিয়া, উজানচর, সদরপুর ও চরভদ্রাসন এলাকার কমপক্ষে ২৮৫টি গ্রামের ২৪ হাজার পরিবারের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ দীর্ঘদিন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং গবাদি পশুর খাদ্যসংকট।

মুন্সীগঞ্জ:

প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মার পানি। এতে পানি ঢুকছে মুন্সীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে। প্লাবিত হচ্ছে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলো। পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে শত শত মানুষ। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল-বানারী, কামারখাড়া, দিঘিরপাড়, পাঁচগাঁও এবং লৌহজং উপজেলার কলমা, কনকসার, হলদিয়া, কুমারভোগ, মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের নিচু গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। টানা পানি বাড়ায় অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায়ও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

রংপুর:

গঙ্গাচড়ায় এবার শুরু হয়েছে ঘাঘট নদের ভাঙন। ৬ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পর ভাঙছে স্থানীয় কবরস্থান। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে রাস্তাসহ আরো বেশ কয়েকটি পরিবারের ঘরবাড়ি ও উঠতি আমনের ক্ষেত।

রাজবাড়ী:

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এতে নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বন্যাকবলিতরা। দুর্গত এলাকায় সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনা খাবার ও গো-খাদ্যের।

শরীয়তপুর:

আবারও বাড়তে শুরু করেছে পদ্মার পানি। রবিবার সকাল ৬টায় শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

কুড়িগ্রাম:

নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। শনিবার বিকেলে ধরলার পানি বিপত্সীমার ৩০ ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপত্সীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৬ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে আমনের ক্ষেত রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমি।

গাইবান্ধা:

ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদের পানি কমতে শুরু করেছে। গত শনিবার বিকেল ৩টা থেকে গতকাল রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি ২১ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপরে এবং ঘাঘট নদের পানি ২২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার সাত সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো নদীতীরবর্তী এলাকা, চর ও গ্রামীণ পথঘাটে পানি থাকায় মানুষ দুর্ভোগে আছে।

নীলফামারী:

নীলফামারীতে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। রবিবার দুপুর ১২টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত শনিবার বিকেল ৩টায় সেখানে পানি প্রবাহ ছিল ২০ সেন্টিমিটার নিচে।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com