* পরাজিত হলে এবারও বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা ট্রাম্পের
* আগাম ভোটগ্রহণে কারচুপির অভিযোগ
* হুমকিতে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছে জনমত জরিপগুলো। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। নেভাডা, অ্যারিজোনা, মিনেসোটা, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন— এই ‘অনিশ্চিত’ প্রদেশগুলোই ঠিক করবে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ফিরছেন কি না।
ট্রাম্পের ভাগ্য প্রেসিডেন্ট পদ ও কারাবাসের হুমকির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থাৎ জিতলে তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন; না জিতলে তাকে কারাগারে যেতে হতে পারে। ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র কোডের অ্যাক্সেস পাওয়া প্রথম দোষী সাব্যস্ত অপরাধী। তার হোটেল ও ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ে নানা অভিযোগ আছে; কর জালিয়াতির অভিযোগও আছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, যদি ট্রাম্প বিজয়ী হন, তাহলে তিনি হবেন হোয়াইট হাউসে যাওয়া ও পারমাণবিক অস্ত্র কোডের অ্যাক্সেস পাওয়া প্রথম দোষী সাব্যস্ত অপরাধী। যদি তিনি বিজয় থেকে ছিটকে পড়েন, তাহলে ৭৮ বছরের ট্রাম্পকে আরও অপমানজনক আদালতের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। মঙ্গলবার দিনটি কার্যত ট্রাম্পের জন্য রায়ের দিন।
ট্রাম্পের জীবনী লেখক গোয়েন্ডা ব্লেয়ার বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) নিজেকে সেই লোক হিসেবে তুলে ধরেন, যিনি এগুলো (আইন-জবাবদিহি) থেকে দূরে চলে গেছেন। তবে তিনি এবার অনেক হিসাব-নিকাশের মুহূর্তের মুখোমুখি হচ্ছেন। তাকে জেলে যেতে হতে পারে; সম্পত্তি কমে যেতে পারে। যাই ঘটুক না কেন এবং তিনি জিতুন বা হারুন– তার স্বাস্থ্যের হিসাব থাকবে। মৃত্যু, অসুস্থতা, স্মৃতিভ্রংশ– এগুলো তিনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।’
নির্বাচনে হেরে গেলে এবারও বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন মার্কিন এই সাবেক প্রেসিডেন্ট। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটের ফল বদলে দেওয়ার জন্য তিনি ও তার মিত্ররা এবার আরও বিধ্বংসী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, এই অভিযোগ তোলার জন্য বেশ কিছু গ্রুপ কাজ করবে। ইতোমধ্যেই তিনি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন।
২০২০ সালের ভোটের পর ২০২১ জানুয়ারির ঘটনা যাতে না ঘটে, এজন্য বেশ কিছু আইনও করা হয়েছে। তবে এই আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করেছেন ট্রাম্পের সহযোগীরা। এই আইন অনুসারে, ভোট গণনার পর অঙ্গরাজ্যগুলোকে তাদের চূড়ান্ত ফল ওয়াশিংটনে পাঠাতে হবে।
প্রেসিডেন্টের জয় নিশ্চিত করার জন্য যে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির ভোট হয় সেই ভোটের আগেই তা পাঠাতে হবে। যদি কোনো অঙ্গরাজ্য ফল পাঠাতে না পারে সেই ক্ষেত্রে কী হবে সেটা জানানো হয়নি। আর এটা নিয়েই ফন্দি আটছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। স্থানীয়ভাবে যাতে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা না করা হয় সেই উদ্যোগ নেবেন তারা। ট্রাম্পের সমর্থকেরা এমনভাবে বাধা সৃষ্টি করবেন যাতে অঙ্গরাজ্যগুলো চূড়ান্ত ফলাফল পাঠাতে না পারে- এমন তথ্যও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
এদিকে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হলে মধ্যপ্রাচ্য আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্রের লড়াই আরও ঘনীভূত হতে পারে। ট্রাম্পের জয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ইরানি নেতারা। তাদের সাথে বেশ চিন্তিত লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনে আঞ্চলিক মিত্ররাও। ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন তাদের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হবে বলে আশঙ্কা।
ইরানের মূল উদ্বেগ হলো, ট্রাম্প ইসরায়েলকে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানোর সুযোগ দিতে পারেন। ইরান, আরব এবং পশ্চিমা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এছাড়া ইরানের তেল শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করার জন্য ট্রাম্প তার ‘সর্বোচ্চ চাপ নীতি’ কার্যকর করতে পারেন।
তারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনিকে এমন শর্তে পারমাণবিক সীমাবদ্ধতা চুক্তি স্বীকার করতে বাধ্য করতে চাইবেন, যা তার ও ইসরায়েলের দ্বারা নির্ধারিত হবে। এই সম্ভাব্য নেতৃত্বের পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এবং ইরানের পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ভেঙে দিতে পারে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরবর্তী মার্কিন প্রশাসন হ্যারিস বা ট্রাম্পের নেতৃত্বেই আসুক না কেন, ইরানের আগে যে ধরনের প্রভাব ছিল তা আর থাকছে না। বিশেষ করে ইসরায়েলের এক বছরের সামরিক অভিযানের পর ইরানের প্রভাব সম্পর্কে সন্দিহান তারা। কারণ ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিল গাজার হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহসহ ইরানের সশস্ত্র সহযোগীদের ক্ষমতাহীন করা। আর সেটা সম্ভব হয়ে উঠছে।