সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান ও তার স্ত্রী শামিমা হাবিব এবং দুই সন্তান আবুর হাসান তানিম ও সনিয়া হাসান তন্নি, বগুড়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার এবং ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী।
এদিন আদালতে দুদকের উপপরিচালক সিরাজুল হক সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাবেক এমপি হাবিব হাসানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়, হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা, পরিবহন চাঁদাবাজি ছাড়াও পদ বাণিজ্য, ডোনেশনের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদেশে পাচার করে ছেলের নামে কানাডায় বাড়ি ক্রয়সহ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান। পাশাপাশি অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে মামলা রুজু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদনটি করেন দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান। এ আবেদনে বলা হয়েছে, মো. নুরুল ইসলাম তালুকদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টিআর কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি নিজ পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলেও তথ্য রয়েছে। পরে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনের ওপর শুনানি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
এদিকে একই দিন ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
ওই আবেদনে বলা হয়েছে, মোকাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসআলম গ্রুপের পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে বেআইনিভাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান।
পৃথক এসব আবেদনে বলা হয়, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় এসব অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে দুদক। কাজেই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিতকরণ প্রয়োজন। একপর্যায়ে দুদকের পৃথক আবেদনগুলো আমলে নিয়ে শুনানি শেষে অভিযুক্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত।