শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রশংসায় দ্য ইকনোমিস্ট

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১

ঢাকা : তোতাপাখির মতো মুখস্থ বুলি নয়, প্রকৃত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়ার ব্যাপারে দেশটি অভাবনীয় উন্নতি করেছে। চার দশক আগেও শিশুদের তিন ভাগের এক ভাগও প্রাইমারি পার করতো না। এখন ৮০ ভাগ শিশু প্রাইমারি পাস করে। কোভিড মহামারীর আগে স্কুলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের উপস্থিতি ছিলো বেশি, ভারত ও পাকিস্তানের চিত্র ঠিক উল্টো।

‘বাংলাদেশ ইজ মেকিং অ্যা সিরিয়াস অ্যাটেম্পট টু ইমপ্রুভ ইটস স্কুলস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দ্য ইকনোমিস্ট বলেছে, শিক্ষার মানোন্নয়ন এখন অনেক কৌশলপূর্ণ। বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১০ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের অধিকাংশই কিছু পাঠ করার ক্ষেত্রে দক্ষ না। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের চার ভাগের এক ভাগেরও বেশি না আছে লেখাপড়ায়, না চাকরি কিংবা প্রশিক্ষণে। কোভিড মহামারীতে দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

তবে মহামারী অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের পথরুদ্ধ করতে পারেনি। ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। প্রবৃদ্ধির মূল দুই খাত রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্স তরতর করে বেড়েছে। যদিও বাংলাদেশের অনেক প্রবাসী শ্রমিক কম দক্ষতার কারণে কম মজুরি পায়। এমনকি প্রতিবেশী ভারত থেকে আসা শ্রমিকদের চেয়ে বেতন কম তাদের। অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনা শ্রমিকদের চেয়ে কম বেতন পায়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য সস্তা দরের শ্রমিককে দক্ষ করে তোলার বিকল্প নেই। আর সেই দক্ষতা সৃষ্টির সময় এখনই। আর এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্মমুখী শিক্ষার যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে। শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করে পরীক্ষায় বসার প্রবণতা থেকে বের করে আনা হবে। পরীক্ষা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান নতুন যে কারিকুলামের কথা বলা হচ্ছে, তা অনেক গবেষণার ফসল। নিয়োগকারী ও চাকরিপ্রার্থীর কথা বিবেচনা করে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষার সঙ্গে পেশার যে অমিল এখন ব্যাপক প্রচলিত, তা আর থাকবে না।

উপমন্ত্রী আরও বলেন, হাইস্কুলে কারিগরী শিক্ষা নিতেই হবে। কাঠের কাজ, গ্রাফিক ডিজাইন, কার মেকানিক, শিশুর যত্ন কিংবা কাঠমিস্ত্রী- এমন বিষয়গুলো থেকে যে কোনো দুটো সাবজেক্ট নিতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা স্কুলের গণ্ডি পার হতে হতে অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হতে পারবে। সরকার আরো বেশি কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী।

শিক্ষায় এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট অনেকে। তবে কেউ কেউ পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন এমন উদ্যোগে। কুয়ালা লামপুরের মালয়া ইউনির্ভার্সিটির শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ নিয়াজ আসাদুল্লাহ নতুন কারিকুলাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দশ হাজারের বেশি মাদরাসা রয়েছে দেশে, এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কারিগরী শিক্ষার আওতায় আনতে না পারলে খুব একটা লাভ হবে না।

আসাদুল্লাহ বলেন, শিক্ষকদের স্বল্প বেতন, প্রশিক্ষণের অভাব এবং ছাত্র:শিক্ষক অনুপাত – এসব সমস্যার সমাধান না করে শুধু নতুন কারিকুলাম দিয়ে কি কিছু হবে?

শিক্ষা খাতে দুর্নীতিও একটা সমস্যা। গ্রামে নিয়োগ পেলে শিক্ষকরা যেতে চান না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ও ঘুষ কাজ করে। ভালো স্কুলের হেড মাস্টার পদে পোস্টিং পেতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।

শিক্ষাখাতে উন্নতি করতে চাইলে বরাদ্দের বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ শিক্ষাখাতে জিডিপির হিসেবে অনেক কম বরাদ্দ দেয়। ইউনেস্কো যেখানে ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ করতে বলে, সেখানে বাংলাদেশ জিডিপির ২ শতাংশের মতো বরাদ্দ দেয়। তবে শিক্ষা উপমন্ত্রীর ব্যাখ্যা হলো, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও শিক্ষার বাজেট বরাদ্দ হয়। সবগুলো যোগ করলে তা নেহায়েত কমও নয়।

ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, এসব কারণেই এতোদিন যাবৎ নেয়া বিভিন্ন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন যে সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা খুবই ভালো, তবে যদি বাস্তবায়ন করা হয়।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com