ঢাকা: রাজধানীর ৯টি মার্কেট, সুপার মার্কেট ও শপিংমল অনেক বেশি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ইতোমধ্যে এসব ভবন আগুন লাগার ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস থেকে ভবনমালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ভবনগুলোর দৃশ্যমান স্থানে ঝুঁকিপূর্ণের নোটিশও টাঙানো হয়েছে।
২০২৩ সালে ঢাকা মহানগরী এলাকায় মার্কেট ও শপিংমল পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। পরিদর্শন শেষে দেওয়া প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, রাজধানীর ৫৮টি মার্কেট, সুপার মার্কেট ও শপিংমল অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ।
এগুলোর মধ্যে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি এবং ৩৫টি সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ। পরিদর্শন করা মার্কেট ও শপিংমলের মধ্যে প্রায় ৭৬ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকির তালিকায় আছে সিটি করপোরেশনের স্থাপনাও।
অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি ভবন হলো- রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, বরিশাল প্লাজা মার্কেট, আলাউদ্দিন মার্কেট, শাকিল আনোয়ার টাওয়ার, শহিদুল্লাহ মার্কেট, শরীফ মার্কেট, মায়া কাটরা (২২ মার্কেট) ও সিদ্দিকবাজারের রোজনীল ভিস্তা।
এ ছাড়া মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে আলম সুপার মার্কেট, উত্তরা মার্কেট (খিলগাঁও), সালেহা শপিং কমপ্লেক্স, মনু মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স, লন্ডন প্লাজা শপিংমল, এ কে ফেমাস টাওয়ার, রোজভ্যালি শপিংমল, মেহের প্লাজা, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, নিউ চিশতিয়া মার্কেট, নেহার ভবন, ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্স, ইসমাইল ম্যানশন সুপার মার্কেট এবং সুবাস্তু অ্যারোমা শপিংমল।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিজয়নগরে এক সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ বন্ধের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, রাজধানীতে গত কয়েক দিনের অভিযানে প্রায় ৪০টির মতো রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়ে দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। তিনি দেখলে আমাদের ডাকবেন। যদি সাক্ষাৎ না পাই, তাহলে সব রেস্তোরাঁর চাবি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়ে অন্য কাজে চলে যাব।
তিনি অভিযোগ করেন, তিতাস গ্যাসের পর্যাপ্ততা নেই। আবার সংযোগ থাকলেও লাইনে গ্যাস নেই। বিকল্প ব্যবস্থা হলো গ্যাস সিলিন্ডার বা লাকড়ি ব্যবহার। লাকড়ি ব্যবহার করলে কিচেনসহ পুরো রেস্তোরাঁ কালো হয়ে যায়, পরিবেশ ঠিক থাকে না। পুরো বিষয়টি নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাস্কফোর্স গঠন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাচ্ছি। ভবিষ্যতের জন্য নির্দিষ্ট একটি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে, যাতে ব্যাঙের ছাতার মতো রেস্তোরাঁ গজিয়ে উঠতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য ব্যবসার মতো রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে কিছু লোক গভীর ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের ওপর অবিচার করা হচ্ছে। বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁয় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে নবাবী ভোজের ১২টি লাইসেন্স আছে। তাহলে কেন সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে?’
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার খবরের কাগজকে বলেন, অগ্নিঝুঁকির তালিকায় থাকা এসব ভবনে তিন দফায় নোটিশ দেওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়। তবে সব ভবনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টাঙানো শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। গতকাল সকালে খিলগাঁওয়ের রেস্তোরাঁগুলোতে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার ঘাটতি খুঁজতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসও যোগ দেয়। সেখানে স্কাই ভিউ নাইটিঙ্গেল টাওয়ার নামের ৮ তলা ভবন পরিদর্শন করা হয়। অগ্নিঝুঁকি থাকায় নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভবনটি সিলগালাও করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। জনবলের স্বল্পতা কাটিয়ে ওঠা গেলে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।’