বসুন্ধরা গ্রুপ নিজেদের জালিয়াতি ঢাকতে রংধনু গ্রুপের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে

আমাদের সময় ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা: বসুন্ধরা গ্রুপ জালজালিয়াতি ও ভূমিদস্যুতার মাধ্যমে গত ৩০ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। হাজার হাজার মানুষের জমিতে জোর করে বালু ফেলে ভরাট করে নিজেদের কবজায় রেখেছে গ্রুপটি। এ জমিগুলো দখল করার পর সেখানে বড় বড় বাউন্ডারি নির্মাণ করে তারা সন্ত্রাসীদের দিয়ে পাহারা বসিয়েছে। রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে একই কায়দায় গ্রুপটি কবজায় নিয়েছে ২ হাজার ৫০০ বিঘা জমি। এর সিংহভাগ তারা বিক্রি করে দিয়েছে। এখন চোখ পড়েছে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের আরও প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমির ওপর। নিরীহ গ্রামবাসীকে তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে ওই জমিগুলো দখলে নিতে চাইছে ভূমিদস্যু গ্রুপটি।

কায়েতপাড়ার নাওড়া গ্রামে জন্ম রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলামের। এ গ্রামের মানুষ বংশপরম্পরায় রফিকুল ইসলামের আত্মীয়। স্থানীয়রা যখন তাদের ভিটেমাটি, জমি হারানোর ভয়ে ভীত, ঠিক তখনই রফিকুল ইসলাম তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। আর তাতেই তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বসুন্ধরা গ্রুপের কর্তাব্যক্তিরা। সেখান থেকেই শুরু রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মামলা আর দমনপীড়ন। বসুন্ধরা গ্রুপ মনে করে, রফিককে গ্রামে ঢুকতে না দিলে তাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গ্রামবাসীর জমি দখল করে নেওয়া সহজ হবে।

বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে জমি কিনে প্রতারিত হওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক। লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে বসুন্ধরা-বারিধারা প্রকল্পের প্রায় ৪ হাজার প্লট বিক্রি করে গ্রুপটি। সাধারণ মানুষ তাদের সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে এ প্লটগুলো কিনেছিল। কিন্তু মালিকানা বুঝে নিতে গিয়ে ওই মানুষগুলো দেখতে পান বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যে ব্লকের প্লট দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল সেখানে আর প্লট নেই। সব প্লট বালু নদের ওপারে নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত কায়েতপাড়ায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কোনো ক্রেতা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে ১৫ থেকে ২০ বছর আগে ১২ লাখ টাকায় কেনা ৩ কাঠা জমির সেই টাকা ফেরত নিয়ে যেতে বলছে। অথচ যে জমি দেখিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ টাকা নিয়েছিল তার বাজারমূল্য এখন ৩ কোটি টাকা। আর যেখানে এখন প্লট বরাদ্দ দিয়েছে সেখানে ১ বিঘা জমির বাজারমূল্য ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এ জমিগুলো বসুন্ধরা গ্রুপ ভয়ভীতি দেখিয়ে কম মূল্যে গ্রামবাসীর কাছ থেকে কিনে নিয়েছিল। এখানেই শেষ নয়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা জমি দখল করে রেখেছে তারা। মূল মালিকরা জমি বিক্রি না করলেও জাল দলিলের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংকে জাল দলিল দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। শুধু সাধারণ মানুষের জমি দখলই নয়, সরকারের বিপুল পরিমাণ খাসজমির দখল এখন বসুন্ধরা গ্রুপের হাতে। খাল ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে গ্রুপটি।

এনজিওকর্মী জুলিয়া জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে তার মায়ের নামে সাড়ে ৮ বিঘা জমি রয়েছে। এগুলো দখল করে জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রিও করে দেওয়া হয়েছে। অনেক দিন থেকে জমি উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ নানা জায়গায় ধরনা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আজও জমি উদ্ধার করতে পারেননি। বেদখল হওয়া জমির মালিকরা ভয়ে নিজেদের জমিতে যাওয়ার সাহস পর্যন্ত পান না। কেউ প্রতিবাদ করলে তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে করা হয় হয়রানি। এমনই একজন ঢাকার স্বনামধন্য সাংবাদিক আতিক। জাতীয় প্রেস ক্লাবে যার ছিল প্রতিদিনের বিচরণ, তাকে কয়েক মাস ধরে আর প্রেস ক্লাবে দেখা যায় না। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন না মরে গেছেন এ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ভয়ে মুখ খুলছেন না। আতিক দখল হয়ে যাওয়া পৈতৃক সম্পত্তি উদ্ধারে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এখন জমি উদ্ধার দূরের কথা, তার খোঁজই পাচ্ছেন না দীর্ঘদিনের সহকর্মী-বন্ধুরা।

এই পোস্ট টি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2023 amadersomoy.net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com